রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা মধ্যবয়সী মোহাম্মদ শাহজাহান একজন ডায়াবেটিসের রোগী। গত দুদিন ধরে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় একটি কোম্পানির উৎপাদিত ইনসুলিন খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
Advertisement
নিজের মহল্লা থেকে আশেপাশের এলাকার বড় বড় ফার্মেসি ঘুরে বেশিরভাগই বন্ধ পেয়েছেন তিনি। যেগুলো খোলা রয়েছে সেগুলোতেও তার প্রয়োজনীয় ইনজেকশনটি খুঁজে পাননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে এসে অসংখ্য ফার্মেসির মধ্যে হাতে গোনা ৩টি ফার্মেসি খোলা পেলেন। দোকানিরা জানালেন, ওই ইনসুলিনের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। দোকানি হতাশার সুরে বললেন, ‘ওষুধ-ইনজেকশনের অর্ডার দিমু কি, ক্রেতাই তো নাই!’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার প্রথম দফায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল এবং পরবর্তীতে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ছুটি ঘোষণা করার পরপরই সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ মানুষ গ্রামে চলে গেছেন। তাছাড়া নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থাকার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের।
Advertisement
করোনার কারণে ফার্মেসি ব্যবসায়ও প্রভাব পড়েছে। অত্যবশ্যক পণ্য হিসেবে ওষুধের দোকান খোলা রাখার কথা থাকলেও, ক্রেতা না থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছোটবড় ফার্মেসি দিনের অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকছে। খোলা থাকলেও ক্রেতার অভাব ফার্মেসি মালিকরা নতুন করে ওষুধের অর্ডার দিচ্ছেন না। ফলে অনেক ক্রেতা প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
লালবাগ, ধানমন্ডি ও রমনা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ওষুধের দোকান বন্ধ। যেগুলো খোলা রয়েছে সেগুলোতে ওষুধ কেনার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। অনেক ফার্মেসিতে ব্যারিকেড দিয়ে দোকানে প্রবেশ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গ্লাসে হাত দিবেন না, দূরে থেকে জিজ্ঞাসা করুন ইত্যাদি কথা লেখা রয়েছে। অধিকাংশ দোকানের সামনে মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
শাহবাগ এলাকার একজন দোকানি জানান, অনেকে বিএসএমএমইউ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ও বারডেম হাসপাতাল ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে ওষুধ কিনতে আসতো। এখন হাসপাতালেও রোগী নেই, ক্রেতাও হাতে গোনা।
তিনি আরও জানান, তারা নিজেরাও করোনা সংক্রমণের ভয়ে ভীত। ক্রেতার মাধ্যমে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় অনেকে ফার্মেনি বন্ধ রাখছেন।
Advertisement
ধানমন্ডি এলাকার মহল্লার একজন ফার্মেসি মালিক বলেন, পাড়া-মহল্লায় সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা ও কাশির জন্য মানুষ ফার্মেসিতেই আসেন। করোনার কারণে এখন জ্বরের রোগী আসলে তারাও ভয় পেয়ে যান। জ্বরের রোগীকে এখন তারা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানান।
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস