দেশজুড়ে

কৃষকের গলায় বিঁধে আছে তরমুজ

তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে পটুয়াখালীতে। তবে যান চলাচল বন্ধ থাকা ও শ্রমিক সংকটে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। আগাম জাতের তরমুজ বিভিন্ন খেতে পাকতে শুরু করেছে। কিছু কৃষক এগুলো বাজারজাত করলেও দাম কম থাকায় দিশেহারা কৃষক।

Advertisement

গলাচিপা দরিবাহের চর এলাকার কৃষক আদুস ছালাম সরদার বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে দাম পাই না। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে। একই এলাকার কৃষাণী ফাহিমা বেগম বলেন, ৩ কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। প্রতি কানিতে জমি আর ওষুধে খরচ ১ লাখ, বদলায় ৫০ হাজার।

যদি করোনাভাইরাস না হতো তাহলে এগুলো ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এখনতো চালান আসছে না। ঢাকায় যেতে গাড়িভাড়া ৭০ হাজার টাকা, সড়কের চাঁদা, লেবার খরচ। এখন খরচ উঠবে কি না তাই সন্দেহ।

তিনি আরও বলেন, নিজে সতর্কতা অবলম্বন করে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা যাবে। কিন্তু তরমুজ বিক্রি করতে না পারলে কৃষক টাকার শোকে মারা যাবে। করোনায় ধরলে যা হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে এরকম চলতে থাকলে।

Advertisement

গলাচিপা চরের কৃষক মো. সোবহান বলেন, গত বছর একশ তরমুজ ৩০ হাজার টাকায় খেত থেকে কিনে নিয়ে গেছে। এখন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে।

রাঙ্গাবালী চরমোন্তাজ এলাকার তরমুজ চাষি মো. মনির হোসেন বলেন, আমাদের চার পাশে নদী। এখানে একমাত্র বাহন লঞ্চ। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে। তরমুজ পেকে গেছে এখন কাটতে হবে। কিন্তু নিয়ে যে যাবো তা সম্ভব না। সব কিছু বন্ধ। এ কারণে খেতেই তরমুজ পচছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত বলেন, তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষক তরমুজ কাটা শুরু করেছে। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাজারজাত করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে আগের অবস্থা ফিরে আসে তাহলে কৃষক ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়েছে। জেলার রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল ও কলাপাড়া উপজেলায় বিভিন্ন জাতের তরমুজ আবাদ হয়েছে।

Advertisement

শহরের নিউ মার্কেট এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী মোশাররফ জানান, তরমুজ তৃনমূল থেকে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে যেত। করোনার ভয়ে মানুষ বের হতে ভয় পাচ্ছে। ঢাকায় তরমুজ পাঠাতে না পারায় লোকালে দাম কম পাচ্ছে কৃষক।

খুচরা বিক্রেতা শ্রীদাম বলেন, দোকানে মাল (তরমুজ) অনেক আছে। কিন্তু গ্রাহক নেই। করোনার জন্য লোকজন আসে না। তাই বেচাবিক্রিও খারাপ।

বিভিন্ন বাজার সূত্রে জানা গেছে, ১৫ কেজি ওজনের প্রতি শত পাইকারি ২৫ হাজার টাকা, ১০ কেজি ওজনের প্রতি শত ১৮ হাজার টাকা, ৮ কেজি ওজনের প্রতি শত ৯ হাজার ৫শ টাকা ও ৫ কেজি ওজনের তরমুজ প্রতি শত ৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতি পিচ বড় সাইজের তরমুজ ২শ থেকে ২২০ টাকা। ছোট সাইজের প্রতি পিচ ১৪০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এফএ/এমএস