গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর থেকেই চট্টগ্রামে এ ভাইরাস পরীক্ষার কিট সংকটের অভিযোগ উঠেছে চারদিক থেকে। প্রথম দুই সপ্তাহে চট্টগ্রামে গড়ে প্রতিদিন ৭-৮টি নমুনা পরীক্ষা হলেও তৃতীয় সপ্তাহের শেষে এসে সেই সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের হাতে এখন পর্যাপ্ত কিট মজুদ আছে। সন্দেহ হলেই রোগীর করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হবে।
Advertisement
তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সামলাতে চলমান লকডাউনে কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে চট্টগ্রাম প্রশাসনে। শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতিমধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে ত্রাণ বিতরণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেকোনো এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে চাইলে তা এ দুটি সংস্থাকে জানিয়ে করতে হবে বলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে ত্রাণ বিতরণের জন্য সময়সীমা বেধে দিয়েছে প্রশাসন। এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন বিকেল ৩টার আগে ত্রাণ বিতরণ শেষ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলা সংক্রান্ত বিভাগীয় কমিটির সভায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাসান শাহরিয়ার কবির, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার মো. গোলাম ফারুক, চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) পরিচালক মো. আবুল হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ সব বিষয়ে মত দেন।
Advertisement
করোনাভাইরাসের কারণে শুরুর দিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছিল। ইতিমধ্যেই তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। সুখবর হলো- এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। তবে ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সমন্বিত প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রামের প্রশাসন।
সভায় অংশ নেয়া ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রায় ১ হাজার টেস্ট কিট মজুদ আছে। এছাড়া আরও কিছু কিট নিয়ে আসার কাজ চলছে। তাই আজ থেকে চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিভাগীয় সমন্বয়ক আ ন ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া চট্টগ্রামের মানুষের জন্য কিটপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আবারও উদ্যোগ নিয়ে আজ ৫০০ কিট ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছেন। এছাড়া কক্সবাজারের করোনা পরীক্ষাকেন্দ্রও প্রস্তুত হয়েছে আজ থেকে।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে দেশের প্রত্যেক উপজেলা থেকে অন্তত দু’জন করে সন্দেহভাজন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্যে আমরা আজ থেকে রোগীর নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়েছি। আজ নতুন করে ১৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে বিআইটিআইডি। এখন থেকে উপজেলা পর্যায়ে কোনো রোগীর মাঝে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে উপজেলা হাসপাতালে গেলে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য উপজেলা হাসপাতালগুলোর ল্যাব টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’
Advertisement
বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিক্ষিপ্তভাবে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পিপিই সরবরাহ করছেন। এ বিষয়টিতে সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে যারাই পিপিই সরবরাহ করবেন, তারা এ সব স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দেবেন। আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী সেসব বিতরণ করব। নয়তো পিপিই অপচয় বা ভুল ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে।’
সভায় অংশ নেয়া কর্মকর্তারা আরও জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগী মারা গেলে তার লাশ দাফনের স্থানসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সিএমপির সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আজকের সভায় করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেলে লাশ দাফনের জন্য সিটি করপোরেশন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফেরাতে এখন থেকে কে কখন কোথায় ত্রাণ বিতরণ করবে সে তথ্য সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দু’টি তালিকা করে প্রয়োজন অনুসারে প্রয়োজনীয় এলাকায় ত্রাণ বিতরণের অনুমতি দেবে। পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করতে চাইলেও প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার দিকে জোর দেন আলোচকরা।
আবু আজাদ/এফআর/এমকেএইচ