পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী- আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দুই দফা জানাজা শেষে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
Advertisement
এর আগে বিকেল ৪টায় ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী শহরের বাসভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মরদেহ এসে পৌঁছলে সেখানে আগে থেকে উপস্থিত শত শত নেতাকর্মী অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। করোনাভাইরাসের কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সীমিত রাখার আহ্বান জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
তার প্রথম জানাজা ঈশ্বরদী পৌর শহরের আলীবর্দী সড়কের নিজ বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব রায়হান ও থানার ওসি বাহাউদ্দিন ফারুকীর নেতৃত্বে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
এ সময় পাবনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ, পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব রায়হান, ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফিরোজ কবিরসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
উল্লেখ্য, আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শামসুর রহমান শরীফ ডিলু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গত ছয় মাস লন্ডন, মুম্বাই ও ঢাকায় চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালের ১০ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
পাবনার বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতা সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অত্যাচার, জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। এক সময়ের প্রতাপশালী জমিদার বংশের সন্তান শামসুর রহমান শরীফ পাবনা জিলা স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে ঈশ্বরদী ও পাকশী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে তার ভুমিকা ছিল অনন্য। তিনি একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৯ মার্চ ঈশ্বরদীর মাধপুরে পাকবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। পঁচাত্তরে পটপরিবর্তনের পর তিনি দীর্ঘদিন বিনা বিচারে জেলখানায় বন্দি জীবনযাপন করেন।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে পাবনা জেলায় শামসুর রহমান শরীফের ভূমিকা ছিল অনন্য। ওয়ান/ইলেভেনের পরও তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়। অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচার ও অগণতান্ত্রিক সরকারের লোভনীয় প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে পাবনা জেলায় একনিষ্ঠভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে অগ্রগামী করেছেন।
১৯৯৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পরপর ৫ বার বিপুল ভোটের ব্যবধানে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শামসুর রহমান শরীফ ছিলেন ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়াবাসীর জননেতা। বিগত সংসদে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তিনি ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
Advertisement
আলাউদ্দিন আহমেদ/আরএআর/পিআর