করোনা ঝুঁকিতেও রাঙ্গামাটি পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শহরকে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে চলছে তাদের অভিযান। যেসব পরিচ্ছন্নতাকর্মী শহরবাসীকে সুরক্ষার জন্য দিনরাত কাজ করছেন; তারাই রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
Advertisement
শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য পৌরসভায় নিয়োজিত আছেন ১১০ জন কর্মী। যাদের মধ্যে ২৫ জন সরাসরি আবর্জনা পরিবহনের সঙ্গে জড়িত। বাকিরা শহরে ঝাড়ু দেয়ার দায়িত্বপালন করেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দেশের মানুষ যখন সচেতন, সেই সঙ্গে মেনে চলছে স্বাস্থ্যবিধি তখন এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মী স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন দিনরাত।
পৌরসভা থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান দিলেও কাজের অতিরিক্ত চাপে তা ব্যবহার করতে পারছেন না তারা। অথচ শহরকে পরিষ্কার রাখতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্বপালন করছেন এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ বেশি করতে হয় বলে রাঙ্গামাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করলেও উপেক্ষিত স্বাস্থ্যসুরক্ষা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (০২ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা অনেকটা অরক্ষিতভাবে কাজ করছেন। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। তারা বিপদে ফেলতে পারেন সবাইকে। এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীর স্বাস্থ্যঝুঁকি কারণে তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন বিপদে।
রাঙ্গামাটি পৌরসভা থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিরাপদ রাখতে, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান দিলেও তা ব্যবহার করতে অনীহা রয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী রনি দাশ বলেন, আমরা সবসময় পৌরবাসীর সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। এত গরমের মধ্যে সবসময় হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পরে থাকা অস্বস্তিকর ও কষ্টকর। তাই এসব পরতে পারি না। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি জানি। এরপরও শহরকে পরিষ্কার রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।
আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বিষু দে বলেন, প্রচুর গরম। এসব পরে কাজ করতে পারি না। সেজন্য খুলে রেখেছি। কিছু করার নেই। কাজ তো করতেই হবেই আমাদের।
Advertisement
পৌরসভার সুপারভাইজার বিপ্লব তালুকদার বলেন, আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পৌরসভার পক্ষ থেকে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু তারা মাস্ক ও গ্লাভস পরতে অনীহা প্রকাশ করছেন। কারণ গরমে এসব পরে কাজ করতে অস্বস্তি লাগে তাদের। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদেরকে সচেতেন করার।
তিনি বলেন, যেখানে দেশের শিক্ষিত মানুষ এখনও সচেতন না, সেখানে যারা সারা বছর ময়লা-আবর্জনা নিয়ে পড়ে থাকে তাদের তো সচেতন করতে একটু সময় লাগবে। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কারণ ঈদ, পূজা-প্লাবন, বিজুতে বছরের প্রতিটি দিনই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা। যেখানে সারা দেশের মানুষ ঘরবন্দি সেখানে তারা মাঠে কাজ করছে মানুষের জন্য।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিরো চন্দ বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সবসময় স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। করোনার সময়ে অনেক বেশি সচেতন হয়ে তাদের কাজ করা উচিত। কারণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শুধু পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা থাকবে এমন নয়; তাদের পরিবাররাও পড়তে পারেন নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায়। তাই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের সময় অবশ্যই তাদের মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরা উচিত। কাজ শেষ করেই দ্রুত সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করে নিতে হবে তাদের।
সাইফুল/এএম/জেআইএম