করোনার সংক্রামণ রোধে নিষেধাজ্ঞার কারণে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর দেশের কয়েকটি জেলা থেকে এসময় ধান কাটার শ্রমিক এলেও এ বছর শ্রমিক আসছেন না। একদিকে করোনায় পাকা ধান কাটতে না পারার দুশ্চিন্তা অপরদিকে আগাম বন্যার ভয়ে দিশেহারা হাওর পাড়ের চাষিরা।
Advertisement
বিশ্বব্যাপী চলছে করোনার সংক্রমণ। বাংলাদেশেও বন্ধ করা হয়েছে যাত্রীবাহী যান চলাচল। জন সাধারণকে নিজ নিজ ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। এ কারণে বছরের একমাত্র বোরো ফসল নিয়ে ধান কাটার শ্রমিক সংকটে পড়েছেন হাওরাঞ্চলের চাষিরা। প্রতিবছর দেশের কয়েকটি জেলা থেকে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলে ধান কাটার শ্রমিক এলেও করোনা সংকটের কারণে এ বছর কেউই আসছেন না। মাঠে পাকা ধান। রয়েছে আগাম বন্যার ভয়। তাই দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই কৃষকের চোখে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর নেত্রকোণায় মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে হাওরাঞ্চলে মোট ৪০ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়। শ্রমিক সংকট ও আগাম বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন বোরো ধান। সারা জেলায় এই মৌসুমে বোরোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ১৯ হাজার ৫৬১ মেট্রিক টন ধান।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর গ্রামের কৃষক কাজল চৌধুরী বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও পাবনা জেলার ধান কাটার শ্রমিকদের আগাম টাকা দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে রাস্তা-ঘাট বন্ধ থাকায় তারা বলছে আসতে পারবে না। এখন দেখছি টাকাও গেলো, পাকা ধানও যাবে আগাম বন্যায়। সরকার যদি ধান কাটার যন্ত্র না দেয় তাহলে বছরের একমাত্র ফসল ঘরে তুলতে পারব না।
Advertisement
একই এলাকার কৃষক ইলিয়াস আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা এখলাসুর রহমান, কাজী নূরুল হুদা, আব্দুল কাদীর ও আলম মেম্বার জানান, মাঠে পাকা বোরো ধান রেখে রাতে ঘুমাতে পারেন না। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি ধান কাটা লেগে যাবে। করোনা ভাইরাসের কারণে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এবার পাকা ধান কাটতে পারবেন না।
খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, যেকোনো মুহূর্তে আগাম বন্যা হয়ে যেতে পারে। হাওরে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পাকা বোরো ধান রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক নেই। সারা বছরে একটা ফসল। ঋণ করে কৃষি কাজ করে যদি ঘরে ফসল তুলতে না পারি তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান বলেন, হাওরের বোরো ফসলকে আগাম বন্যা থেকে রক্ষা করতে ফসল রক্ষা বাঁধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বন্যা হলে ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। তাই বোরো ধান কাটার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে হারভেস্টার দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম জানান, বোরো ধান কাটার শ্রমিক সংকট রয়েছে। এ বছর নেত্রকোণায় কৃষকদের ধান কাটার জন্য ৪২টি হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হবে। নতুন পুরাতন মিলে যে হারভেস্টার মেশিন রয়েছে তাতে সংকটের সমাধান হবে। প্রয়োজনে আরো মেশিনের ব্যবস্থা করা হবে। দ্রুত ধান কাটার জন্য আধুনিক যন্ত্র সরবরাহ করা না হলে আগাম বন্যার ঝুঁকিতে থাকবে হাওরাঞ্চলের কয়েক লাখ কৃষকের বছরের একমাত্র বোরো ধান।
Advertisement
এফএ/জেআইএম