খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন দেশবাসীর হিরো। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে ইতালিকে এনে দিয়েছিলেন ইতিহাসের চতুর্থ শিরোপা। ফাবিও ক্যানভারোর অধীনেই সবশেষবার বিশ্বকাপ জিতেছে ইতালি।
Advertisement
এক যুগেরও বেশি সময় পরে এখন অন্য ভূমিকায় বিশ্বকাপজয়ী এ অধিনায়ক। কলম তুলে নিয়েছেন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে, দেশবাসী উদ্দেশ্যে লিখেছেন খোলা চিঠি।
মহামারী করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীন থেকে হলেও এটি এখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে ইউরোপ ও আমেরিকাতে। যার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি পড়েছে ইতালিতে। এরই মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ১৩ হাজার ১৫৫ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখের বেশি।
নিজ দেশের যখন এই অবস্থা, তখন সুদূর চীনের গুয়াংজুতে অবস্থান করছেন ফাবিও ক্যানভারো। চীনের উহান প্রদেশে মহামারী হয়ে ছড়ালেও, গুয়াংজুতে এর প্রভাব পড়েনি তেমন। ফলে এ করোনা সংকটে নিরাপদই ছিলেন ক্যানভারো।
Advertisement
এরই ফাঁকে প্লেয়ার্স ট্রিবিউনে দেশবাসী উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন তিনি, জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই চিঠির চুম্বকাংশঃ
‘দেশের সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমাদের দেশে এখন যা হচ্ছে তা দেখে আমি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। আমি বলে বুঝাতে পারব না, ইতালিকে এমন অবস্থায় দেখে আমার কেমন লাগছে। প্রতিদিনই অনেক অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এসব খবর দেখে আমার মন শান্ত থাকছে না। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত মানুষদের আমি স্যালুট জানাতে চাই। আপনারাই এখন দেশের সত্যিকারের নায়ক।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা কেউই সুপারম্যান নই। আমাদের কারোরই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার মতো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। এই মহামারী যখন চীনে আক্রমণ করলো, তখন আমি ভেবেছিলাম ইতালিয়ানরা এটা থেকে নিরাপদ থাকবে। অনেকের মতো আমিও এটিকে খাট করে দেখেছিলাম, ভেবেছিলাম এটা হয়তো সাধারণ কোনো ফ্লু। আমরা কতোই না ভুল ছিলাম!
আমরা সবাই জানি, ইতালি একটি অসাধারণ দেশ। আমাদের পর্যটন কেন্দ্র বিশ্বের অন্যতম সুন্দর। আমাদের জলবায়ুও খুবই দারুণ, যা বাইরে ঘোরার অনেক সুযোগ দেয়। আমাদের খাবার, ফ্যাশন সবই অসাধারণ। কিন্তু ইতালিতে জীবনযাপন এতোই ভালো যে, প্রায়ই আমরা নির্ভার হয়ে যাই। প্রায়ই আমরা ব্যক্তি সুবিধার ব্যাপারে ভাবি, সাধারণের কথা না ভেবেই। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সম্ভাবনাগুলো শেষ করছি।
Advertisement
তবে সৌভাগ্যবশত অনেক সময় পাওয়া যায়, যেখানে আমরা আমাদের গর্বের জায়গাগুলো দেখাতে পারি। এই সময়টা মূলত তখন, যখন সবকিছু কঠিন হয়ে যায়। ইতালির হয়ে খেলতে গিয়ে এ জিনিসটা আমি অনেকবার দেখেছি। যেখানে খেলাধুলাই অন্যকিছুর বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। যখন জাতীয় দল খেলে, তখন সবাই এটার অংশ হয়ে যায়। আর যখন ইতালিয়ানরা একজোট হয়, তখন আমরাও ভালো করতে থাকি।
এখন, করোনাযুদ্ধের মাঝে এসে আমাদের একসঙ্গে লড়তে হবে। যাতে নিজেদের সেরাটা দিতে পারি। আমার এখনও পড়ে ১৯৮২ সালের কথা, যখন ইতালি বিশ্বকাপ জিতল। আমার বয়ষ তখন মাত্র ৮, ন্যাপলসে থাকি। বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো আমি আমার আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে একসঙ্গে দেখেছি। আমার এখনও মনে আছে, ইতালি গোল করলেই সবার মধ্যে কতটা প্রাণচাঞ্চল্যতা কাজ করতো। সবাই একইরকম আনন্দ উপভোগ করতো, ২০০৬ সালেও একইরকম দেখা গেছে।
এখন আমাদের সেই একই স্পিরিট দেখাতে হবে দেশের সংকটময় মুহূর্তে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনেক উদাহরণ আমরা দেখিয়েছি। যারা বাড়িতে বন্দী আছেন তাদের বলবো, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত থাকা মানুষদের সাধুবাদ জানাতে সবাই একসঙ্গে হাততালি দিয়েছে, একসঙ্গে গান গেয়েছে বারান্দায়। আমাদের এমন ঐক্য দেখাতে হবে।
যখন এই সংকটময় সময় শেষ হবে, তখন ইতালি পুরোপুরি ভিন্ন থাকবে। কেউ হয়তো চাকরি হারাবে, কেউ নিজের ব্যবসা হারাবে। তখন আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমরা শুধু আশা করতে পারি যে, করোনার প্রতিষেধক খুব শীঘ্রই আবিষ্কৃত হবে। যাতে করে এই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ওঠা যায়। তার আগপর্যন্ত আমাদের ধৈর্য্য ধরে থাকতে হবে। তাই এখন বাড়িতে থাকুন, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান এবং যথাযথ সম্ভব সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
এটা সত্যি যে, আমরা কেউ সুপারম্যান নই। তবে যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, তখন যেকোন কিছু অর্জন করতে পারি।’
ক্যানভারোর পুরো চিঠিটি পড়তে ক্লিক করুন
এসএএস/জেআইএম