করোনার প্রভাবে তখনো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন ক্রিকেট লিগ বন্ধ হয়নি। ঠিক ওই সময়ে আন্দ্রে রাসেলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দারুণ ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিওটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এই অলরাউন্ডারের প্রতিদিনকার শারীরিক অনুশীলন বা ফিটনেস ট্রেনিংয়ের ভিডিও।
Advertisement
যাতে দেখা গেল আন্দ্রে রাসেল কিভাবে প্রতিদিন সময় করে নিজের ফিজিক্যাল ট্রেনিং, জিম ওয়ার্ক, ওয়েট ট্রেনিং আর সুইমিং করেন। ওই ভিডিওর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সেটা আন্দ্রে রাসেলের নিজের বাসায়। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের জ্যামাইকার বাসিন্দা আন্দ্রে রাসেলের নিজের বাসায়ও রয়েছে বিশাল জিমনেশিয়াম এবং সুইমিংপুল রয়েছে।
ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। নিজের বাসায় অত বড় জিমনেশিয়াম আর সুইমিং পুল! সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজেই সম্ভব। কারণ সাগর পাড়ের বাড়িগুলো অনেক বড় এলাকা নিয়ে হ। সেখানে বড়সড় জিম, ওয়েট ট্রেনিংসহ অন্যান্য ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের সরঞ্জাম আর সুইমিং পুল নির্মাণ সম্ভব।
কিন্তু বাংলাদেশে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা শহরে ক্রিকেটারদের পক্ষে অত বড় জায়গায় এমন সাজানো গোছানো, অত্যাধুনিক সরঞ্জামে ভরা জিমনেশিয়াম তৈরি রীতিমত অসম্ভব। এখানে শুধু অর্থটাই মূল ‘ফ্যাক্টর’ নয়। জায়গা ও পরিবেশও বড় কারণ।
Advertisement
কিন্তু জানেন কি! অতবড় না হলেও, বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেটারদের বেশ কয়েকজনের বাসাই এখন ‘মিনি জিমনেসিয়াম’! করোনা আতঙ্কে এখন সব বন্ধ। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, সিনেমা হল, নাট্য মঞ্চ আর খেলার মাঠ কিছুই খোলা নেই। সব সরকারি ছুটি। অঘোষিত হোম কোয়ারেনটাইনে প্রায় সবাই। খুব জরুরি কাজ ছাড়া কেউই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না।
কিন্তু ক্রিকেটারদের একদম হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার উপায়ও নেই। কারণ আর সবার মত আরামে-আয়াশে ঘরে বসে কাটালে ফিটনেসে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনিবার্য্যভাবে শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। তাই ফিটনেস সচেতন ক্রিকেটাররা বিশেষ করে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা সেই ছুটি শুরুর দিন থেকেই প্রায় সবাই ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসইজ করতে শুরু করেছেন।
কিন্তু সেটাই যথেষ্ঠ নয়। কারণ এখন ক্রিকেটারদের ফিজিক্যাল ট্রেনিং শুধু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ ছাড়াও বেশ কিছু সরঞ্জাম কিনে নিয়েছেন। যেহেতু নিকটবর্তী জিমনেশিয়াম বা বিসিবির জিমে যাওয়া সম্ভব নয়, বাইরে খোলা জায়গায় দৌড়াদৌড়িরও সুযোগ নেই। তাই ক্রিকেটাররা যতটা সম্ভব নিজ বাড়িতেই রানিং ও জিমওয়ার্কের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। এবং তাদের ঘর এখন মিনি জিমনেসিয়ামে পরিণত হয়েছে।
ওই তালিকায় ‘পঞ্চ পান্ডবে’র তিন সদস্য মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং তামিম ইকবালসহ মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার এবং আরও কয়েকজন নিজেদের বাসাতেই জিমনেশিয়ামের কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে নিয়েছেন এবং তারা ঘরেই নিয়মিত রানিং মেশিনে দৌড়াদৌড়ি করছেন। জিমওয়ার্কও চলছে।
Advertisement
এর মধ্যে মুশফিকুর রহীম এই সেদিন নিজের ফেসবুক পেইজে তার জিমওয়ার্কের ভিডিও আপলোড করেছেন। যা রীতিমত ভাইরাল হয়ে গেছে। ভক্ত ও সমর্থকরা সবাই বার বার দেখেছেন, নিজেকে শারীরিকভাবে সক্ষম ও ফিট রাখার কি দারুণ তাড়না ও প্রানান্ত চেষ্টা মুশফিকের! শুধু জিমওয়ার্ক করাই নয় , তা শেষ করে ব্যাট হাতে ‘শ্যাডো’ প্র্যাকটিসটাও সাড়ছেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অন্যতম নির্ভরতা।
মুশফিক দেখিয়েছেন, ইচ্ছেটাই আসল। ইচ্ছে আর আন্তরিক চেষ্টা থাকলে শোবার ঘর থেকে শুরু করে, ড্রয়িং রুমকেও সাময়িকভাবে জিমনেশিয়ামে রূপান্তরিত করা যায়। জানালা, চেয়ার, টেবিল এমনকি বালিশকেও ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের সরঞ্জাম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন মুশফিক। তাকে দেখে বাকিরাও করছেন।
ক’দিন আগে জাগো নিউজের সাথে আলাপে ওয়ানডে ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল আর টেস্ট ক্যাপ্টেন মুমিনুল হকও বলেছেন, ‘জাতীয় দলের ফিজিও আর ট্রেনার তাদের এই সময়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা যা করতে বলেছেন, তারা বাসায় যতটা সম্ভব তা করার চেষ্টা করেছেন। মুমিনুল নতুন জিমনেসিয়ামের সরঞ্জাম কিনেছেন। জানা গেছে, তামিম আর রিয়াদের বাসায় আগে থেকেই জিমওয়ার্ক আর রানিং করার সামগ্রী ছিল। তারা সবাই এখন ঘরে বসেই ফিটনেস ট্রেনিংটা সারছেন। সাইফউদ্দীন আর সৌম্য সরকারসহ আরও কজনও নাকি বাসায়ই জিমওয়ার্ক সেরে নিচ্ছেন।
এআরবি/আইএইচএস/