ছোট্ট একটি হাঁড়িতে ভাত রান্না হচ্ছে। আনুমানিক বছর পাঁচেক বয়সী একটি ছেলেশিশু ফ্যাল ফ্যাল করে সেই হাঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে বার বার। একটু পর পর দৌড়ে গিয়ে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের কাছে ‘ভাত রান্না হতে দেরি হচ্ছে কেন, কখন ভাত খেতে পারবে’ বলে তা জানতে চাইছিল। ‘এইতো, এক্ষুণি হয়ে যাবে’ বলে সান্ত্বনা দিচ্ছিল তার মা।
Advertisement
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বুধবার (১ এপ্রিল) শেষ বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনকালে রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে কাঁটাবনগামী রাস্তা প্রায় জনমানবশূন্য দেখা যায়। মাঝে মাঝে সাইরেন বাজিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স ও হাতেগোনা কয়েকটি প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও রিকশা। রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়ি।
নীলক্ষেত ঢালের পাশে ফুটপাত সংলগ্ন ফাঁকা রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটির নিচে তিনটি ইট বসিয়ে চুলা বানিয়ে ভাত চড়িয়েছেন হতদরিদ্র শেফালি বেগম। ঢাকা শহরে নিজের ঘরবাড়ি নেই। ফুটপাতেই পঙ্গু স্বামী ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে দিন কাটে তার।
স্বাভাবিক সময়ে কাঁটাবন মোড়ে কখনও ভিক্ষা করে কখনও লুচনি বিক্রি করে সংসার চালান। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি টানা ছুটি ও রাস্তাঘাটে মানুষ না থাকায় আয়-রোজগার নেই। ফলে গত কয়েকদিন স্বামী সন্তানসহ জমানো কিছু টাকায় চাল ও আলু কিনে খেয়ে না খেয়ে কাটিয়েছেন।
Advertisement
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে শেফালি বেগম জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত খাওয়ার কষ্ট হলেও আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে খাবার পাচ্ছেন। সকালবেলা কারা যেন খিচুড়ির প্যাকেট দিয়ে গেছে। দুপুরে সরকারি দলের লোকজন পরিচয়ে একটি প্যাকেট (চাল, আলু, তেল ও সাবান) দিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘পোলাডা ভাত খাইতে পছন্দ করে। সকালে খিচুড়ি খাইলেও পেট ভরেনি। চাল, আলু ও তেল পাইছিলাম, কিন্তু পুলিশ ফুটপাতে রান্না করতে দেয়নি বলে দুপুরে পোলাডারে কিছুই খাওয়াইতে পারি নাই। তাই বিকেলে দেড় পট চালের ভাত চড়াইছি। ভাতের সাথে শাক ও ঢেঁড়শ ভাজি করে ছেলেকে খাইতে দিবো।’
এ অবস্থা চলতে থাকলে এবং নিয়মিত সাহায্য না পেলে তাদের মতো হতদরিদ্র মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে বলে জানান শেফালি।
শেফালি যখন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন তার ছেলেটি বার বার এসে জানতে চাইছিল, ‘মা, ভাত খামু কহন?’
Advertisement
এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ