মতামত

নতুন মোড়কে স্থানীয় নির্বাচন

বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছিল। অবশেষে সিদ্ধান্ত এল। এখন থেকে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরেই দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচন হবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন অনুমোদন করেছে।  নির্বাচনে মেয়র, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে। স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। তবে এ বিষয়ে বিধি ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া পাঁচ বছরের নির্দিষ্ট মেয়াদ পূরণের পর কোনো কারণে নির্বাচন না হলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে।দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং স্থানীয় সরকার বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতারাই এসব নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকে তাই এ বিষয়ে স্ববিরোধিতার কোনো মানে নেই। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশও হবে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন হলে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এতে স্থানীয় সরকারকে রাজনীতি করণের পথ সুগম হবে। বাস্তবতা হচ্ছে সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনে চলে না। দলগুলো প্রকাশ্যেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়, প্রচারও চালায়। ব্যালটে শুধু দলীয় প্রতীক থাকে না। এমনকি ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বয়কটও করে রাজনৈতিক দলগুলো। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময়েও দলগতভাবে নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি দেখা গেছে। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফলের ক্ষেত্রেও কোন দলের কে কে জয়ী হল- এভাবে হিসেব করা হয়। গণমাধ্যমেও বিষয়টি এভাবেই আসে। এছাড়া বৃটেনসহ পার্শ্ববর্তী ভারতেও দলীয়ভাবেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়। আমাদের দেশের প্রশাসনিক কাঠামোও ওই সব দেশের মত।  সুতরাং স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনোভাবেই দলীয় প্রভাবমুক্ত নয়।   কথা হচ্ছে, দলীয় পরিচয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুফল পেতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোই যেহেতু প্রার্থী মনোনয়ন দিবে সেক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীরা যাতে মনোনয়ন পায় সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলও যাতে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। নির্দলীয় নির্বাচন হলে সেখানে স্থানীয় অনেক যোগ্য এবং ভালো ইমেজ আছে এ রকম প্রার্থীদের নির্বাচিত হয়ে আসার একটি সুযোগ ছিল। দলীয়ভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনের বিধান রাখা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে তারা কতোটা সুবিধা করতে পারবে সেটি দেখার  বিষয়। এছাড়া দলীয়ভাবে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদেরও বাড়তি সুযোগ পাওয়ার একটি অবকাশ আছে। এ সকল বিষয়ও ভেবে দেখতে হবে। কথা এই যে, দলীয়ভাবেই হোক আর নির্দলীয়ই হোক মানুষ তখনই এর সুফল পাবে যখন সত্যিকার অর্থে স্থানীয় সরকার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। এর আগে নির্বাচন প্রক্রিয়াটিও অবশ্যই হতে হবে অবাধ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু। যার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আর নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। কেবল মোড়ক পাল্টালেই হবে না, ভেতরের পণ্যটির গুণগত মানই আসল কথা।  এইচআর/এমএস

Advertisement