করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ লকডাউনে রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে ইউরোপের দেশ পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি অভিবাসীরা। সহজ শর্তে অভিবাসনের আশায় গত জানুয়ারি মাসে প্রচুরসংখ্যক মানুষ লিসবনসহ পর্তুগালের বিভিন্ন শহরে আসেন। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
Advertisement
তাছাড়া আগে থেকে যেসব অভিবাসী বসবাস করছেন তাদেরও গত বছরের নভেম্বর থেকে কাজ নেই। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মূলত এখানে কাজের চাহিদা ও ব্যবসা বাণিজ্য ভালো থাকে। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে জরুরি অবস্থায় তাদের খাবার, বাসা-ভাড়াসহ আর্থিক সংকটে পড়েছেন হাজারও প্রবাসী।
এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রবাসের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। লিসবনে বাংলাদেশ কমিউনিটির এই দুর্যোগকালীন এগিয়ে এসেছেন কিছু তরুণ ও প্রবীন প্রবাসী ব্যক্তিবর্গ; গড়ে তুলেছেন ‘লিসবন প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্ট’।
ট্রাস্টটি গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় প্রায় ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা করেছে এবং সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার এই সহযোগিতা চলমান থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সবার জন্য এক সপ্তাহের চাহিদা বিবেচনায় (৫ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, পেঁয়াজ ৩ কেজি, ১ লিটার তেল, ১ কেজি ডাল, দুধ ও মুড়ি প্রদান করা হয়)। লিসবনের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে ইতোমধ্যে ‘লিসবন প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্ট’ এর কার্যক্রম সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে।
Advertisement
বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব জহিরুল আলম জসিমকে প্রধান সমন্বয়ক করে ১৫ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গড়ে ওঠেছে এই ট্রাস্ট। ট্রেজারার হিসেবে আছেন মহিন উদ্দিন ও আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী, জনসংযোগের দায়িত্ব পালন করছেন তানভীর আলম (জনি) ও জাকির হোসাইন, এতে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন আফজাল হোসেন, মিজানুর রহমান মাসুদ, ইউসুফ তালুকদার, ইমরান হোসেন ভুঁইয়া, দেলোয়ার হোসাইন, জামাল ফকির, রেজাউল বাসিত শিমুল, বেলাল আহমদ, বশির আহমেদ, সুমন আহমেদ প্রমুখ।
ট্রাস্টের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান সমন্বয়ক জহিরুল আলম জসিম বলেন, ‘এই দু্র্যোগ মুহূর্তে যে প্রবাসী ভাই ও বোনেরা খাদ্য সংকটে আছেন তাদেরকে সহায়তার উদ্দেশ্যে এই ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। ট্রাস্টের সদস্যদের মিলিত প্রচেষ্টায় সাধ্য অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাব। সেই সাথে লিসবনের বিত্তবানদের অনুরোধ করব তারা যেন তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন।
তাছাড়া এ সংকট মোকাবিলায় লিসবনের আরেক ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ও আঞ্চলিক সংগঠন গ্রেটার নোয়াখালী অ্যাসোসিয়েশন ইন পর্তুগাল, ‘প্রবাসী পরিবার’ নামে একটি হেল্পিং ফান্ড গঠন করেছে। এর লক্ষ্য হবে চলমান এই সংকটে যারা দিনাতিপাত করছেন তাদের যথা সম্ভব সাহায্য করা এবং যারা সাহায্য করতে চান তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা।
এছাড়া পর্তুগালের বাণিজ্যিক নগরী পোর্তোতে বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর উদ্যোগে আগামী দুই ও তিন এপ্রিল পোর্তো শহরের রুয়া ডু ক্যাটিভোর (Rua do cativo) ৮ নম্বর ঠিকানায় সংগঠনের পক্ষ থেকে আপদকালীন বিশেষ সহায়তা প্রদান করা হবে।
Advertisement
বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর সভাপতি শাহ আলম কাজল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম, সহ-সংগঠক মোহন, সুজন, বেলাল, সমির, শাকিল প্রমুখ তাদের সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুরো পৃথিবী নভেল করোনাভাইরাসে আজ কার্যত বিপর্যস্ত, তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইউরোপ মহাদেশ। ইতালি, স্পেন, জার্মান, ফ্রান্স তৈরি হয়েছে মৃত্যুপূরীতে! এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইউরোপের অভিবাসন বান্ধব দেশ পর্তুগালেও আতংক বিরাজ করছে।
বেড়েই চলেছে মহামারি কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। মঙ্গলবার দুপুরর পর্যন্ত ১৬০ জনের মৃত্যু এবং দেশটিতে ৭৪৪৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পর্তুগিজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএস)। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার তালিকায় এখন পর্যন্ত আগের ৪৩ জনই।
সেই সাথে ৪৬১০ জন সন্দেহভাজনের রক্তের কণিকা এখনো পরীক্ষাধীন রয়েছে যা যেকোন মুহূর্তে প্রকাশ করা হতে পারে তাদের ব্যপারে, তবে এই মুহূর্তে সারা দেশে ৪০০৩৩ জনকে কোয়ারেন্টাইন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানায় পর্তুগালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় (ডিজিএস)।
এমআরএম/এমকেএইচ