দেশজুড়ে

সমিতির লোনের টাকা দিতে রিকশা নিয়ে বেরিয়েছি

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা দুনিয়া। এ মহামারি থেকে বাঁচতে বাংলাদেশেও চলছে লকডাউন অবস্থা। করোনা ভয়ে সড়কে মানুষের আনোগোনা যেমন কমেছে, তেমনি নেই হাটবাজারের ব্যস্ততা। এর প্রভাব পড়েছে মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সন্দ্বীপেও। তবে এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। দিনে যাদের আয় হত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এমন মানুষের এখন খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই দায়। সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিনাতিপাত করছে রিকশা-ভ্যানচালকরা। একদিকে মৃত্যু ভয় অন্যদিকে ক্ষুধার জ্বালা এই দুইয়ে মিলে চরম দুর্দিনে রয়েছেন তারা।

Advertisement

সন্দ্বীপ পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সফিক (৫৫)। রিকশা চালিয়ে চলে তার সংসার। তার সঙ্গে সন্দ্বীপের প্রাণকেন্দ্র এনাম নাহার মোড়ে দেখা হয় মঙ্গলবার দুপুর ১ টার দিকে। অনেক কষ্টে তার দিন যাচ্ছে বলে জানান জাগো নিউজকে।

সফিক বলেন, ভাই আগের মতো যাত্রী নেই। দুপুর ১টা পর্যন্ত ইনকাম হয়েছে মাত্র ২০ টাকা। হাটে-ঘাটে মানুষ নেই, তাই ভাড়াও পাচ্ছি না। আগে আয় করতাম প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা। এখন ১০০-১৫০ টাকার বেশি হয় না। দ্রব্যমূল্যের যে দাম, এভাবে আসলে সংসার চলে না। কিছুদিন পূর্বে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। আশা সমিতির লোন আছে। সপ্তাহে ৬৫০ টাকা লোন দিতে হয়। গত সপ্তাহেও পরিশোধ করেছি। সামনের সপ্তাহ কী হবে জানি না। ভাড়া নেই, তবুও রিকশা নিয়ে বেড়িয়েছি। লোনের টাকা তো দিতে হবে। ছোট দুইটা ছেলে-মেয়ে পড়াশুনা করে, তাদের পেছনেও খরচ অনেক। করোনায় নাকি সরকার গরিবদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছে। কিন্তু আমরা কিছুই পাইনি। জানি না সামনের দিন কীভাবে যাবে।

সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া এলাকার আরেক রিকশাচালক আবদুল মন্নান। বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। এ বৃদ্ধ বয়সেও রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হয় মন্নানকে। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন। তবে মেয়ের জামাই মারা যায় চার সন্তান রেখে। তাই চার সন্তানসহ তাদেরও দেখাশুনা করতে হয় এই বৃদ্ধকে। মঙ্গলবার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন আবদুল মন্নান।

Advertisement

তিনি বলেন, ভাই, আর পারছি না। নিজের অনিচ্ছায় প্রতিদিন রিকশা নিয়ে বের হতে হয়। ছেলেকে সখ করে বিয়ে করানোর পরে সে বউ নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। মেয়েটাও কপাল পোড়া। ছোট ছোট চার ছেলেমেয়ে রেখে জামাই মারা গেছে। আমার স্ত্রীও অসুস্থ থাকে সবসময়। একদিন রিকশা না চালালে না খেয়ে থাকতে হবে আমাদের। আগে ইনকাম হতো ৪০০/৫০০ টাকা। গত কয়েকদিনে তেমন ইনকাম করতে পারি নাই। হাট বাজারে মানুষ নেই। ইনকাম কেমনে হবে?

আবদুল মন্নান বর্তমান করোনা সংকটে কোনো সরকারি সহযোগিতা পাননি বলে জানান।

মগধরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার ইউনিয়নের গরিব অসহায়দের জন্য ১৬ টন চাল বরাদ্দ করেছি। ২/১ দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এ সংকটসময় মুহুর্তে সবার অসহায়দের পাশে থাকা উচিত।

মানবাধিকার কর্মী কামরুল ইসলাম টিটু জাগো নিউজকে বলেন, করোনায় দিনমজুর বিশেষ করে যারা দিন এনে দিনে খায় তাদের অবস্থা আসলে খারাপ। অনেক কষ্টে আছে তারা। সমাজের বিত্তবানদের তাদের পাশে থাকা উচিত।

Advertisement

এমএফ/জেআইএম