করোনাভাইরাসে প্রশ্নবিদ্ধ বিশ্ববিবেক। অতিক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের কাছে পরাস্ত গোটা দুনিয়া। প্রতিষেধক মিলছে না মহামারির এতো দিনেও। অথচ মানুষ মারার যন্ত্র বানাতে কতই না চেষ্টা, কতই না বিনিয়োগ!
Advertisement
তবু বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষ দাঁড়াচ্ছে মানুষের পাশে। স্থবির বিশ্বে বিবেকের দরজা খুলে সহায়তার হাত বাড়াচ্ছে করোনার এমন দিনে। দ্বার বন্ধ রেখেও রাষ্ট্র দাঁড়াচ্ছে রাষ্ট্রের পাশে, মানুষ দাঁড়াচ্ছে মানুষের পাশে।
সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তায় মানবিকবোধ জাগ্রত হচ্ছে নতুন করে। প্রশ্ন প্রকৃতির কাছে মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে৷ এরপরও কিছু ব্যক্তিস্বার্থ, সামাজিক অসঙ্গতি অবাক করছে বিবেকবানদের।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মানুষ যখন কূলহারা, তখন এ মানুষদেরই কেউ কেউ হিংসা, স্বার্থের পরিচয় দিচ্ছেন বিবেকহারা হয়ে। উত্তরায় করোনা রোগীদের জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানাতে বাধা এলো, খিলগাঁওয়ে কবরস্থানে করোনা রোগীর লাশ দাফনে বাধা এলো। বাধা এলো আকিজ গ্রুপের হাসপাতাল নির্মাণেও। করোনার প্রভাবের সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্যও বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকে।
Advertisement
সমাজের এই অসঙ্গতি নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় বিশিষ্টজনদের কাছে।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, করোনার প্রভাবে মানুষ যত আপন হচ্ছে, তা আগে ঠিক দেখা যায়নি। সবাই সবাইকে দূরে রাখছে, অথচ মানবিকবোধটা জাগ্রত রেখেই। এ এক নতুন পৃথিবী যেন।
তিনি বলেন, মানুষের অসহায়ত্বের এমন দিনেও কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করলাম। কেউ কেউ নিজে বাঁচার চেষ্টা করছে। লাশ দাফনে বাধা মিলছে। এটি রীতিমত অবাক করেছে। মানুষ প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেয় না, এটিই তার প্রমাণ। অথচ সমাজ পচে গেলে কেউ রক্ষা পাব না।
লেখক, গবেষক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের কাছে বিশ্ব ধীর ধীরে পরাস্ত হচ্ছে। মানুষের যেন আসলে কিছুই করার নেই। কত চেষ্টা জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে, অথচ লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।
Advertisement
এই গবেষক বলেন, এই একটি রোগের কারণে মানুষে মানুষে দূরত্ব বাড়ছে ঠিক, কিন্তু সামাজিক এবং মানবিকবোধ জাগ্রত করার সুযোগও এসেছে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসার সুযোগ পেয়েছে। মানুষ হিসেবে মানুষের যে দায়, তা উপলব্ধি করার সময় এসেছে। অথচ এমন সময়েও মানুষকে স্বার্থপর হতে দেখছি। হাসপাতাল করতে না দেয়া, লাশ দাফনে বাধার মতো ঘটনা মানব ইতিহাসে অসভ্যতা৷ এই আচরণ কোনো মানুষের হতে পারে না।
গবেষক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, মানুষ যদি মানবিক হতে না পারে তাহলে এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। মানুষের দায়টা বুঝতে হবে। সচেতনতার নামে অন্যের অধিকার হরণ করে আসলে ভালো থাকা যায় না। ভালো থাকতে হলে সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে হয়।
তিনি বলেন, এমন সময়ে সবার আচরণে ভালোটাই প্রকাশ করা জরুরি। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে দেখছি। আবার হিংসা, জুলুমও দেখছি। আমি মনে করি, সহিষ্ণু মনোভাব প্রকাশ করেই এই মহামারি মোকাবিলা করতে হবে।
এএসএস/এইচএ/পিআর