করোনায় ‘লকডাউন’ অবস্থায় সৈকতের বালিয়াড়িতে কুকুরের সঙ্গে ঘুমানো শিশু ইমন কক্সবাজারের ডিসির বাংলোতে শনিবার রাত থেকে মানবিক আশ্রয় পেয়েছে। এর একদিনের মাথায় ডাক বাংলোর অতিথি হয়ে এসেছে ইমনের সঙ্গী কুকুরটিও। ইমন ও কুকুরটি এখন ডাকবাংলোতে সময় কাটাচ্ছে। এ দৃশ্য রূপকথাকেও হার মানিয়েছে বলে মনে করছেন ডাকবাংলোর অধিবাসীরা।
Advertisement
সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসক ও তার বাংলোর সবার অকৃত্রিম মমতায় পরিচ্ছন্ন জীবন পেলেও শিশু ইমন তার বিপদের সঙ্গীকে ভোলেনি। তারই ইচ্ছায় বিচ কর্মীর সহযোগিতায় রোববার সন্ধ্যায় ইমন নিজে গিয়ে কুকুরটিকে খুঁজে বাংলোতে নিয়ে আসে। জানা যায়, মহামারি করোনার সংক্রমণ রোধে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার সৈকতসহ পর্যটন স্পটে বেড়ানো নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে সবধরনের পরিবহন, দোকানপাট ও কর্মক্ষেত্র। ফলে একপ্রকার লকডাউন অবস্থায় পর্যটন নগরী কক্সবাজার। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নবিত্ত, দিনজীবী ও পর্যটক বা বিচ এলাকার খাবার হোটেলের উচ্ছিষ্ট চেয়ে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষগুলো। এ লকডাইন অবস্থায় কোথাও না গিয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে কুকুরের সঙ্গে অভুক্ত ঘুমিয়ে দিন পার করছিল ৬-৭ বছরের শিশু ইমন।
টহলে গিয়ে বালিয়াড়ির লাইটের আলোতে অচেতন ঘুমে থাকা ইমন ও কুকুরের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেন কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। ২৬ ও ২৭ মার্চ মধ্যরাতে তোলা পৃথক দুটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচকর্মীদের মাধ্যমে খুঁজে শনিবার রাত দেড়টার দিকে ডিসির ডাকবাংলোতে আনেন ইমনকে। সেখানে পরিচ্ছন্ন জামা পরিয়ে নিজের তত্ত্বাবধানে পছন্দের খাবার খাওয়ান জেলা প্রশাসক।
আফাজ উদ্দিন নামে ডাকবাংলোর এক কর্মজীবী জানান, রোববার সকাল থেকেই শিশু ইমন বার বার কুকুরটি নিয়ে আসার বায়না ধরে। জেলা প্রশাসকসহ অন্য যাকে পাচ্ছে তাকেই কুকুরটির কাছে যাওয়ার কথা বলছিল। সকালে ত্রাণ বিরতরণসহ নানা অফিসিয়াল কাজ শেষে দুপুরে বাংলোতে এলে ডিসি স্যারকে আবারো অনুনয় করে ইমন। ফলে ডিসি স্যারের নির্দেশে বিচকর্মীরা ইমনকে সঙ্গে নিয়ে রোববার বিকেলে সৈকত এলাকায় যান। খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যার দিকে কুকুরটিকে পেয়ে অবশেষে ডাক বাংলোতে নিয়ে আসে তারা।
Advertisement
তিনি আরো জানান, কুকুরটিও সুবোধ বালকের মতো ইমনের পেছন পেছন বাংলোতে চলে আসে। ইমন বাইরের বেঞ্চিতে বসলে তার পা ঘেঁষে বসে আরাম করছিল কুকুরটি। এ দৃশ্য সবাইকে হতবাক করেছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, মানবতা প্রকৃতির অকৃত্রিম দান। শুধু মানুষে মানুষে নয়, প্রাণী ও মানুষের মাঝেও এর প্রকাশ ঘটে। দায়িত্ববোধ থেকেই অসহায় ইমনের অবস্থান ডিসির ডাকবাংলোয়। কিন্তু কুকুরটির আসা প্রাণী-মানুষের ভালোবাসার বন্ধনে। এটি মানবতার জয়গান। বিপদাপন্ন অসহায়দের সহায় হওয়া প্রশান্তির কাজ।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/পিআর
Advertisement