খেলাধুলা

২৪ ঘণ্টা ঘরেই কাটছে তামিমের, দোয়া করছেন দেশের মানুষের জন্য

প্রাণনাশি করোনার কারণে ১০ দিনের ছুটি চলছে সারা দেশে। সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত। যারপরনাই শঙ্কিত। খুব দরকারি কাজ ছাড়া কেউই বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না। ঘরে বসেই সর্বোচ্চ সতর্ক-সাবধানি বেশিরভাগ মানুষ। শুনতে খারাপ লাগলেও কঠিন সত্য হলো, একদম দিন এনে দিন খাওয়া শ্রেণি ছাড়া অফিস যাত্রীদের বড় অংশ ঘরে শুয়ে বসেই আপনজনের সাথে কাটাচ্ছেন।

Advertisement

কিন্তু ক্রিকেটারদের কি আর সে উপায় আছে? করোনার কারণে প্রিমিয়ার লিগ এক রাউন্ড হয়ে বন্ধ হয়েছে আজ নিয়ে ১২ দিন। ক্লাব প্র্যাকটিস থেকে শুরু করে সবরকম অনুশীলন বন্ধ। খোলা আকাশের নিচে অর্থ্যাৎ জনসন্মুখে শেরে বাংলা স্টেডিয়াম, সাথে লাগোয়া বিসিবি একাডেমি মাঠ আর ইনডোর- কোথাও প্র্যাকটিসের সুযোগ নেই। করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে আর সবার মত ক্রিকেটারদের ঠিকানাও এখন নিজ নিজ ঘর। ঘরে বসে অন্যের সান্নিধ্য যতটা সম্ভব এড়িয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সাবধানি ক্রিকেটাররা।

মহান স্রষ্টার আনুকুল্যও চাইছেন সবাই। সমাজের অন্য সব পেশাজীবির মত ক্রিকেটাররাও যে যার ঘরে বসে মহান সৃষ্টিকর্তাকে কায়মনোবাক্যে ডাকছেন। তার করুনা ও দয়া চাইছেন। করোনা আতঙ্ক ছড়ালেও অন্য সবার মত ঘরে শুয়ে বসে থাকার উপায় নেই ক্রিকেটারদের। নিজেকে ফিট রাখার তাগিদও আছে। সেই কাজটিও মন দিয়ে করতে হচ্ছে। যার যার মত বাসায় ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে কাটাচ্ছেন সবাই।

যারা সারা বছর মাঠে অনেক প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেন। বিশ্বের ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলার ও স্পিনারদের ঘূর্ণিজালের মোকাবিলা করেন। সেই সব ক্রিকেটাররা করোনার ভয়াবহতায় কি ভাবছেন? তাদের অনুভুতি কি? প্রিয় ক্রিকেটার এই করোনার ভয়াবহতায় কি করছেন? কি ভাবছেন? আতঙ্ক, উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার ভিতরেও তা জানার আগ্রহ আছে ভক্ত ও সমর্থদের।

Advertisement

পাঠকদের সে কৌতুহল নিবারণে আজ রোববার জাগো নিউজের সাথে একান্তে কথা বলেছেন জাতীয় ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আলাপে পরিষ্কার হলো, আর সবার মত তামিমও সর্বোচ্চ সতর্ক-সাবধানি। ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না একদমই।

‘২৪ ঘণ্টা বাসাতেই কাটছে। যতটা সম্ভব অন্য মানুষের সান্নিধ্য এড়িয়ে চলার চেষ্টাও আছে। মুখেও তাই বললেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে নিরাপদে থাকতে সবাই যা যা করার পরামর্শ দিচ্ছেন, যে সব কাজ করার কথা বলা হচ্ছে তাই করার চেষ্টায় আছি। যা বর্জনীয়, তা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলছি’- বলছেন তামিম।

নিজে সতর্ক ও সাবধানতার পাশাপাশি স্ত্রী-সন্তানদেরও যতটা সম্ভব নিরাপদে রাখার প্রাণপন চেষ্টায় তামিম। সঙ্গে মা আর বড় ভাই নাফিস ইকবালের কথাও ভাবছেন। নিজে ঢাকায় অবস্থান করছেন; কিন্তু চট্টগ্রামে নিজেদের বাসায় আছেন মা। সময় বের করে ঠিক তার খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি তামিম সৃষ্টিকর্তার দয়া প্রার্থী। তার কথা, আমি বা আমরা সবাই সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি। সাবধানে থাকার পাশাপাশি করোনা থেকে দুরে থাকতে যা যা করার তা করতে পারি। যা করলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি- তা না করার চেষ্টাও করতে পারি; কিন্তু তারপরও যে হবে না- এমনটা কি গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়?

Advertisement

এজনই তামিমের অনুভব, উপলব্ধি, যতটা সম্ভব বেশি করে দরকার স্রষ্টার দয়া ও করুণা কামনা করা। তার ভাষায়, ‘আমি বা আমরা যতই সতর্ক থাকার চেষ্টা করি না কেন, আল্লাহ’র রহমত সবার আগে দরকার। প্রাণনাশি করোনা থেকে গোটা বিশ্ববাসীর মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করতে ভুল হয়নি তার। তাইতো তামিমের শেষ উচ্চারন, মহান আল্লাহ সবাইকে করোনা থেকে হেফাজতে রাখেন। আর আমাদের দেশে যেন করোনার ভয়াল থাবায় কম আক্রান্ত হয়।’

ব্যাটিংয়ে বরাবর পজিটিভ তামিম কিন্তু ব্যক্তি জীবনেও ইতিবাচক মানসিকতার। সব সময়ই ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গিতে সবকিছু খেয়াল করেন। তার ভাষায় আমি যে কোন বিষয়ে নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা কম করি। নেগেটিভ কথাও খুব কম বলার চেষ্টা করি।

কথা প্রসঙ্গে উঠলো প্রিমিয়ার লিগ প্রসঙ্গ। করোনার কারনে মাত্র এক রাউন্ড হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে এবারের প্রিমিয়ার লিগ। শেষ পর্যন্ত যদি না হয়, তাহলে কি করবেন? সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে তরুণ ও স্বল্প খ্যাতির এবং বোর্ডের সাথে সব রকমের চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য কিছু করার চিন্তা-ভাবনা আছে কি?

এ প্রশ্ন করা হলে তামিম বলেন, ‘আমি নেগেটিভ ভাবতে চাই না। প্রিমিয়ার লিগ হবে না, আমি তা ভাবতে চাই না। আমি তো মনে করি করোনার ভয়াল থাবা মুক্ত হয়ে আবার মাঠে গড়াবে প্রিমিয়ার লিগ এবং আমি প্রিমিয়ার লিগ দিয়েই মাঠে ফিরতে চাই। বলতে পারেন প্রিমিয়ার লিগ খেলতে আমি মুখিয়ে আছি। আর এই লিগ যে অনেক ক্রিকেটারের রুটি রোজগারের উৎস, তা খুব ভাল জানি। প্রিমিয়ার লিগ না হওয়া মানে অনেক ক্রিকেটারের অর্থকষ্টে পড়ে যাওয়া। তাই আমি কোনোভাবেই চাই না যে, লিগ না হোক। আমার আশা প্রিমিয়ার লিগ হবে এবং সবাই মিলে তা খেলবো। তাতে করে আর কারোরই অর্থ কষ্ট হবে না।’

এআরবি/আইএইচএস