জাতীয়

আমি করোনামুক্ত : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না, এমন সন্দেহ থেকে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পরীক্ষায় তিনি উতরে গেছেন অর্থাৎ তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি।

Advertisement

রোববার (২৯ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) করোনাভাইরাস সম্পর্কিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত থাকাকালে এক সংবাদকর্মীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি-না এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই হোম কোয়ারেন্টাইন রয়েছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমি তো কাজ করছি। করোনাভাইরাসে আমি নিজে আক্রান্ত নই। আমি নিজে টেস্টও করিয়েছি। কাজেই আমি কোনোভাবে আক্রান্ত নই, আমি কোয়ারেন্টাইনে আছি বলব না। যেভাবে অন্যরা রয়েছে আমিও সেভাবে রয়েছি।’

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো অনেক বড় মন্ত্রণালয়। বড় মন্ত্রণালয়ে তো অনেক লোক যাতায়াত করেন। ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তাদের বাইরে আরও অনেক লোকজন যাতায়াত করেন। আমরাও তো কাজ করি। সুতরাং সেখানে কেউ আক্রান্ত হতেই পারেন।

Advertisement

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন কি-না, তা স্পষ্ট করেননি মন্ত্রী।

তিনি দাবি করেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।

জাহিদ মালেক বলেন, অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল বলে বাংলাদেশ ভালো রয়েছে। চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকে অর্থাৎ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে। বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি, ট্রিটমেন্ট প্রটোকল তৈরি এবং ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য তিন হাজার বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। সারাদেশে ল্যাবরেটরি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ঢাকার বাইরে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড আইসিইউ নেই এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকার বাইরে বড় বড় হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ আছে। আমরা অনেক আগেই নির্দেশনা দিয়েছি, একটি আইসিইউ কর্নার প্রস্তুত রাখতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য যদি প্রয়োজন পড়ে। যদিও সারা দেশে আইসিইউ সংকট রয়েছে।

Advertisement

‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারি হাসপাতালে ৫০০ ভেন্টিলটর রয়েছে। এসব ভেন্টিলেটর থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভেন্টিলেটর মেশিন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে। আরও ৩৫০ ভেন্টিলেটর কিছুদিনের মধ্যেই আনা হবে। যে ভেন্টিলেটরগুলো নিয়ে আসা হয়েছে তার কিছু সংখ্যক আমরা জেলায় জেলায় হাসপাতালগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। করোনা রোগীদের পরীক্ষার জন্য ৪৫ হাজার কিট মজুদ রয়েছে।’

চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যেই তিন লাখ পিস পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী) সরবরাহ করা হয়েছে এবং প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার পিপিই তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিছু কিছু মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হয়ে সরকারের ইতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার আহ্বান জানান।

সম্প্রতি রাজধানীর খিলগাঁও কবরস্থানে একটি লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কেবল সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এক ওয়ার্ডবয় ও গাড়িচালক ছিলেন। অথচ আইইডিসিআর থেকে বলা হচ্ছে তাদের তত্ত্বাবধানে লাশদাফন করা হয়েছে। লাশ দাফন নিয়ে এক ধরনের আতঙ্কও কাজ করছে। কী পন্থায় কী সুরক্ষা দিয়ে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হচ্ছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, লাশ দাফন করার একটি সুনির্দিষ্ট প্রটোকল রয়েছে সেটা আইইডিসিআর জানে। যারা লাশ দাফন করবেন তাদের ভালোভাবে বলে দেয়া হয়েছে। আইইডিসিআর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবে।

ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, দেশে করোনাভাইরাসে নতুন করে কোনো আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরসহ বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও তাদের কারও দেহে করোনা শনাক্ত হয়নি। ফলে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮ জনই রয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ৫ জন। বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৮ জন।

জেইউ/এমইউ/এইচএ/পিআর/এমকেএইচ