রামপুরার বাসিন্দা মো. মামুন চাকরি করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে কোনো রকমে নাস্তা সেরে দৌড় দেন অফিসে। অফিসের কাজ শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। এমন ব্যস্ত জীবনেই সয়ে গেছেন।
Advertisement
কাজের পেছনে ছুটে বেড়ানো যে মামুনের ঘরে বসে অলস সময় কাটানো বা মোবাইল-ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করা সব থেকে বিরক্তি লাগতো করোনাভাইরাস আতঙ্কে তিনি এখন প্রায় গৃহবন্দি। সংসারের টুকিটাকি কেনাকাটা ছাড়া খুব একটা বাহির হন না। কর্মব্যস্ত জীবন ছেড়ে গৃহবন্দি জীবনে বিরক্তির ফেসবুক আর অনলাইন ঘেঁটেই সময় কাটছে তার।
শুধু মামুন নন সবার মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে সরকার ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করতে বলেছে।
আতঙ্কে অতি প্রয়োজন ছাড়া বেশিরভাগই ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। ফলে দিনের ঝলমলে সূর্যের আলোতেও অনেকটাই জনমানবহীন যান্ত্রিক ঢাকা। সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকা চষে বেড়ানো কর্মব্যস্ত মানুষগুলো নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের গৃহবন্দি করে রেখেছেন।
Advertisement
অনেকটাই নিঃসঙ্গ এ জীবনযাত্রায় কর্মব্যস্ত মানুষগুলোর একটি বড় অংশ ফেসবুক, ভাইবার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে অলস সময় পার করছেন। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি জানতে ঢুঁ মারছেন বিভিন্ন অনলাইনে।
নিজেকে ইন্টারনেট দুনিয়ায় বন্দি রাখার পাশাপাশি কেউ কেউ ছোট বাচ্চাদের গৃহবন্দি রাখতে হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন। বাহিরের আলোবাতাসে খেলাধুলার সুযোগ বঞ্চিত শিশুরাও মোবাইল ঘেঁটে কার্টুনদেখে ঘরের মধ্যে সময় পার করছেন।
রোববার (২৯ মার্চ) রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা মামুন বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজের পেছনে ছুটে বেড়াই। সেই আমি এখন নিজে ঘরে বন্দি থাকছি। আমার দু’টি ছোট বাচ্চা আছে। ওদের নিয়েই যত চিন্তা। ওদের কথা মাথায় রেখে নিজেকে সব সময় নিরাপদ রাখার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, সকালে অফিসে যাওয়া এবং রাতে বাসায়ে ফিরে বাচ্চাদের কিছুটা সময় দেয়াটাই ছিল আমার জীবন। কিন্তু এখন সারাক্ষণ ঘরে থাকি। ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে একটুও ভালো লাগে না, সময় কাটতে চায় না।
Advertisement
‘যে ফেসবুককে আমি বিরক্তির মনে করতাম, এখন বেশিরভাগ সময় সেই ফেসবুকই ঘাঁটি। এছাড়া ইমোর মাধ্যমে আত্মীস্বজন ও পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। গত এক সপ্তাহে যে পরিমাণ সময় ইন্টারনেটে থেকেছি, আমার মনে হয় গত ছয় মাসেও এতো সময় আমি ইন্টারনেটে থাকিনি’ বলেন মামুন।
মিরাজ নামের আরেকজন বলেন, এখন অফিস নেই। লম্বা ছুটি পেয়েছি। চাইলে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় দেখে আর যাইনি। নিজেকে অনেকটাই গৃহবন্দি করে ফেলেছি। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হই না। এই আতঙ্কের বন্দি জীবনে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করেই বেশিরভাগ সময় পার করতে হয়।
‘আমার তিন বছরের একটি ছেলে আছে তাকে প্রায় এক মাস ঘরের বেইরে বের করিনি। ঘরের বেইরে বের হওয়ার জন্য ছেলের আবদারের শেষ নেই। কিন্তু করোনার ভয়ে ছেলেকে বেইরে বের করিনি। সব সময় টিভিতে কার্টুন চ্যালেন ছেড়ে রাখি ছেলের দেখার জন্য। মাঝে মধ্যে কার্টুন দেখার জন্য মোবাইলও দেই। জানি এগুলো বাচ্চাদের জন্য ভালো নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো উপায়ে ছেলেকে ঘরে বন্দি রাখাই সেভ’ বলেন বেসরকারি একটি কোম্পানির এই এক্সিকিউটিভ।
এমএএস/এএইচ/পিআর