নওগাঁর রানীনগরে ঢাকা থেকে আসা এক যুবক জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ করোনা ভাইরাস সন্দেহে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন তিনি। শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। রাতেই তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রোববার সকাল থেকে দাফনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে ওই যুবক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গ্রামবাসী ও ইউপি মেম্বার প্রথমে তাকে গ্রামেই প্রবেশ করতে দেননি।
Advertisement
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। শনিবার সকালে প্রচণ্ড জ্বর আর কাশি নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা থেকে নওগাঁয় আসেন। এ সময় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও গ্রামের কিছু লোক তাকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেননি। চিকিৎসার জন্য তাকে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানেও চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দেন। এরপর আবারও তাকে নিয়ে এসে ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দায় রাখা হয়। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হলে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠান। অবশেষে তিন হাসপাতাল ঘুরে রামেকে গিয়ে মারা যান তিনি।
ওই যুবকের বাবা বলেন, ছেলেকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা চিকিৎসা না দিয়েই রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। এরপর বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কিছু ওষুধ ও ইনজেকশন লিখে দেন চিকিৎসকরা। সেগুলো দিয়েও ছেলের শরীরের জ্বর কোনোভাবেই কমছিলো না। এরপর থেকে কোনো চিকিৎসক আমার ছেলের আশপাশে আর আসেনি। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অতিরিক্ত জ্বরে অবশেষে ছেলে রাত ৮টার দিকে মারা গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু বলেন, জ্বর-সর্দির খবর পাওয়ার পর তার পরিবারকে বলেছিলাম চিকিৎসকের প্রতিবেদন নিয়ে গ্রামে আসতে। প্রতিবেদনে কোনো সমস্যা না থাকলে গ্রামে আসবে, আর সমস্যা থাকলে আসার দরকার নেই। গ্রামবাসীর কথা ভেবেই এমন সীদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
Advertisement
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, তার শরীরে ১শ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে জ্বর ছিলো। তাকে হাসপাতালে অবচেতন অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ওই যুবক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তিনি মেনিনজাইটিস রোগে মারা গেছেন। তিনি যে করোনা ভাইরাসে মারা যাননি মৃত্যু সনদে চিকিৎসক তা নিশ্চিত করে দিয়েছেন। যেহেতু মেনিনজাইটিস রোগে মারা গেছেন তাই লাশ দাফনে কোনো সমস্যা নেই।
আব্বাস আলী/এফএ/পিআর
Advertisement