ডাক্তার নেই, নার্স নেই, নেই রোগীদের ভিড়। নিরাপত্তারক্ষীরা মুখে মাস্ক লাগিয়ে প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আছেন। অ্যাম্বুলেন্সগুলো সারিবদ্ধভাবে রাস্তায় পড়ে আছে। জনমানবহীন রাস্তায় দূর থেকেও রিকশার বেলের টুং টাং শব্দও স্পষ্টই কানে বাজে। লাল ও নীল রংয়ের নিয়ন সাইনবোর্ডের রঙিন আলোর প্রতিবিম্বে বহুতল ভবনের ফাঁকা চেয়ার-টেবিলগুলো চোখে পড়ে।
Advertisement
শনিবার রাত ৯টা। ধানমন্ডি ল্যাব এইড হাসপাতালের ডক্টরস চেম্বারের সামনে এমনই এক দৃশ্য চোখে পড়ে। হাতেগোনা কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কাউকে দেখা গেল না। মাত্র কয়েকদিন আগেও ব্যস্ততম এ হাসপাতালে রোগীর ভিড়ে রাস্তায় দাঁড়ানো যেত না সেই হাসপাতাল এখন বলতে গেলে রোগীশূন্য।
শুধু এ হাসপাতালটিই নয়, ধানমন্ডি এলাকার ব্যস্ততম পপুলার, আনোয়ার খান মডার্ন, গ্রিনলাইফ ও সেন্ট্রাল হাসপাতাল ঘুরে একই দৃশ্য দেখা গেছে। রাত ১০টা না বাজতেই হাসপাতালগুলো যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় বলে জানালেন স্থানীয় এক বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, করোনাভাইরাস আতঙ্কে রাতে তো দূরের কথা দিনের বেলায়ও অনেক চিকিৎসক পারতপক্ষে চেম্বারে আসছেন না। হাসপাতালে কোনো রোগী এলে তাকেও নানা প্রশ্ন ও জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রবেশপথে রোগী ও তার সঙ্গে আসা অভিভাবককে বিদেশ থেকে এসেছেন কি-না, জ্বর, হাঁচি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট আছে কি-না, ইত্যাদি প্রশ্ন করে সন্তোষজনক জবাব পেলে তবেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
Advertisement
রাজধানীর আশকোনা বাসিন্দা এক তরুণ জানান, তিনি ধানমন্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালের হটলাইনে ফোন করে তার বাবাকে একজন নিউরোলজিস্ট দেখানোর জন্য সিরিয়াল দেন। তাকে দুপুর ১টার আগে এলে ডাক্তার দেখাতে পারবেন বলে জানানো হয়।
তিনি দুপুর সোয়া ১২টায় হাসপাতালে আসেন। তার বৃদ্ধ বাবাকে দেখে প্রবেশপথে রীতিমতো জেরা শুরু করেন হাসপাতালের কর্মকর্তারা। তিনি ওই চিকিৎসকের পুরোনো রোগী এবং ফাইল দেখানোর পরও নানা তথ্য-উপাত্ত নেন। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে চেম্বারে গিয়ে শোনেন ডাক্তার চলে গেছেন।
তিনি প্রশ্ন করেন দেশে এখনও তেমন করোনা রোগী নেই। ইতালি ও চীনের মতো বেশি রোগী এলে তো এরা হাসপাতালের চৌহদ্দিতে আসতে দেবে না।
পপুলার হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের চেম্বারে শতাধিক চিকিৎসক রোগী দেখলেও করোনা আতঙ্কে দু-চারজন ছাড়া কেউ চেম্বারে আসছেন না। তাছাড়া রোগীও কমে গেছে। দিনের বেলা কিছু রোগী ও তাদের অভিভাবক এলেও রাতে হাসপাতাল বলতে গেলে ফাঁকা পড়ে থাকে। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীসহ কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কেউ থাকেন না।
Advertisement
করোনা আতঙ্কে আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এমইউ/বিএ