প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানুষ এখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। রাস্তাঘাট, হাটবাজার এমনকি হাসপাতালেও মানুষের উপস্থিতি কমেছে। প্রতিদিন পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে যেখানে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী ভর্তি থাকে সেখানে শনিবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগী পাওয়া গেছে মাত্র ২৫ জন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫০ জন রোগী আউটডোরে বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন।
Advertisement
এদিকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা না থাকায় অধিকাংশ চিকিৎসক হাসপাতালে আসছেন না। ফলে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।
শনিবার (২৮ মার্চ) সকাল ১০টায় পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আউটডোরে সেবা নিতে এসেছেন সদর উপজেলার মৌকরন এলাকার বাসিন্দা রফিকুল মিয়া (৬০)। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন যাবৎ পায়ে ব্যথার সমস্যায় ভুগছি। আজ টিকতে না পেরে টিকিট কেটে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বসে রয়েছি। ডাক্তার আসলেন না, এখন প্রায় সাড়ে ১২টা বাজে।
একই এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা বেগম বলেন, হাতে প্রচন্ড ব্যথা। ডাক্তার দেখানোর জন্য আজ সকালে আউটডোরের কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছি। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে টিকেট নিয়ে বসে আছি, কিন্তু ডাক্তার আসেননি।
Advertisement
হাসপাতালের শিশু বিভাগের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজন মহিষকাঠা এলাকার বাসিন্দা মনিকা বলেন, কিছু সময় আগে আড়াই মাস বয়সী ছেলে সামিরকে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করেছি। ইমারজেন্সিতে তখন ডাক্তার পেয়েছি। কিন্তু এরপর আর কোনো ডাক্তার পাইনি। তবে ওয়ার্ডে নার্সরা আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, অধিকাংশ চিকিৎসক নিম্নমানের পিপিই পেয়েছে। চিকিৎসকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে তারা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না।
হাসপাতালে অপেক্ষমাণ রোগীর স্বজনরা জানান, ব্যস্ত হাসপাতাল আজ করোনা আতঙ্কে নিরব। এ যেন এক অচেনা হাসপাতাল।
হাসপাতালের আউটডোর কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে আউটডোরে রোগীদের সংখ্যা খুবই কমে গেছে। অধিকাংশ চিকিৎসক আসেন না।
Advertisement
এদিকে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত না হলেও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন অনেকে। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭১ জন বিদেশফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এছাড়া ৩৮৬ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নূর জাহান আক্তার বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে হাসপাতালে নতুন কোনো রোগী আসছে না। যে সকল রোগী ছিল তারাও চলে যাচ্ছে। আমাদের ডিউটি আমাদের করতে হবে। তাই ডিউটি করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পিপিই পাইনি। আমরাও আতঙ্কের মধ্যে আছি।
আরেক সিনিয়র নার্স ফাতিমা বলেন, আমাদের কোনো পিপিই নেই। নিজেদের টাকা দিয়ে আমরা নিজেরা মাস্ক ও গ্লাভস কিনে ব্যবহার করছি।
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, সকল চিকিৎসা চলমান রয়েছে। মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গণজমায়েত এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। তাই সকলে বাড়িতে বসে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। কেউ আর হাসপাতালমুখী হচ্ছে না।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/আরএআর/এমকেএইচ