রাজধানীর অলি-গলিতে এবং বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো কুকুরগুলোর প্রাণ বাঁচে খাবার হোটেল ও ডাস্টবিনের উচ্ছিষ্ট খেয়ে। তবে দেশে সাধারণ ছুটি ও করোনাভাইরাসের কারণে খাবার হোটেলসহ সব ধরনের হোটেল বন্ধ। খাবারের সন্ধানে দল বেঁধে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো।
Advertisement
রাজধানীর বনশ্রীতে এমনই কয়েকটি ক্ষুধার্ত কুকুরকে আহার করিয়েছেন সানজিদা মোস্তাফিজ লিন্ডা নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা। কুকুরদের বিস্কুট ও বাসায় খাবারের উচ্ছিষ্টসহ নানা খাবার খাওয়ালেন তিনি। শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্টও করেছেন লিন্ডা।
মুহূর্তেই অনেক অনেক শেয়ার-কমেন্ট হতে থাকে পোস্টটিতে। অনেকেই লিন্ডার পোস্টটিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজ নিজ এলাকার কুকুরদের খাওয়ানো শুরু করেন।
ফেসবুক পোস্টে লিন্ডা বলেন, ‘রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখি, এক বেদনাদায়ক দৃশ্য! রোডে যেই এক দুজন লোক যাচ্ছে, দল বেঁধে কুকুরেরা তাদের ঘিরে ধরছে খাবারের জন্য। বনশ্রী ডি ব্লকে আমি যে বাসায় থাকি তার আশপাশের বাসার নিচে ৭-৮টা খাবারের হোটেল আছে। আজ ৩-৪ দিন সব বন্ধ। এই রোডে অনেক কুকুর এসব হোটেলের উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকে। সব বন্ধ হওয়ার কারণে এ সব নিরীহ প্রাণীর যে সীমাহীন কষ্ট শুরু হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ওদের কষ্ট দেখে ছুটে গেলাম কিছুটা খাবার দেয়ার জন্য। খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি এই সকল প্রাণীর প্রতিও আমাদের সদয় হওয়া উচিত। অন্তত যার পক্ষে যা দিয়ে সম্ভব হয়। হোক তা বাসা থেকে খাবার রান্না করে দেয়া থেকে শুরু করে বেলকনি থেকে বিস্কুট ছুড়ে দেয়া, কিংবা ঘরের প্রতিদিনের উচ্ছিষ্টগুলো জমিয়ে রেখে দিন শেষে নিজে বা বাসার দারোয়ানের হাতে ওদের জন্য দেয়া। অন্তত এই দুর্দিনে এ প্রাণীগুলো যেন বেঁচে থাকতে পারে। শুধু আমাদের টিকে থাকার কথা ভাবলেই হবে না, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি প্রাণীকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে...’
Advertisement
এ দিকে একই উদ্যোগ নিয়েছে বাড্ডার দুই যুবক শিক্ষার্থী সোহেল সরকার ও আফিফ। সোহেল সরকার হাবিবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ফাইনাল বর্ষের ছাত্র। তার বন্ধু আফিফ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। দুজনই উত্তর বাড্ডার খিলবাড়িটেক এলাকায় বসবাস করেন। অসহায় কুকুরকে দেখে শুক্রবার নিজেদের টাকা দিয়ে ৫ কেজি চাল ও মুরগির নাড়ি-ভুঁড়ি, গিলা-কলিজা কিনে রান্না করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কুকুরদের খাওয়ালেন তারা।
সোহেল সরকার বলেন, ‘চারদিকে মহামারির আতঙ্কে সব কিছু বন্ধ রয়েছে। কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁও খোলা নেই। এতে এ অসহায় কুকুরগুলো না খেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় চিৎকার করছিল। রাতে ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে এসে বিষয়টি লক্ষ্য করলাম। আমার মনে হলো, কুকুরগুলো ক্ষুধায় এমনটি করছে, নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনি। কুকুরগুলোর কাছাকাছি যেতেই চারদিক থেকে ক্ষুধার্ত অসহায় চোখে আমাকে ঘিরে খাবারের জন্য যেন আকুতি জানাচ্ছিল। এরপর দ্রুতই আমার খাবারগুলো কুকুরদের মধ্যে বিলিয়ে দেই।’
তারা ক্ষুধার্ত ও অসুস্থ কুকুরদের প্রতি দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এআর/এফআর/এমএস
Advertisement