কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত পরিত্যক্ত ফাইজা এখন আজিমপুর ছোটমনি নিবাসের ভিআইপি শিশু। সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে পরিচালিত এ নিবাসটিতে বর্তমানে শূন্য থেকে দুই বছর বয়সী ২৬ জন পিতৃমাতৃহীন, পরিত্যক্ত, দাবিদারহীন ও উদ্ধারকৃত শিশু বসবাস করলেও সকলের নজর এখন এই শিশুটির দিকে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশুটিকে একনজর দেখতে ছোটনিবাসে ছুটে আসেন অনেক নারী-পুরুষ। তাদের কেউ কেউ অনাথ এ শিশুটিকে লালনপালনের জন্য নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দুপুর দেড়টায় সরেজমিন পরিদর্শনকালে নিবাসটির উপ-তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা আক্তারকে অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। তিনি জানান, সকাল থেকে শতাধিক নারী ও পুরুষ শিশুটিকে একনজর দেখে লালনপালনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। আগত সকলকে তিনি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুটিকে লালন পালনের গুরুদায়িত্ব মাত্র গতকালই (রোববার) পেয়েছি। এখনো শিশুটির জলাতঙ্ক রোগের এক ডোজ টিকা নেয়ার বাকি রয়েছে। আগামী পরশু টিকা দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এত মানুষের ভিড় সামলাতে এক পর্যায়ে সেলিনা আক্তার উত্তেজিত হয়ে আগতদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি শিশুটির কাস্টডিয়ান মাত্র। শিশুটিকে নিতে চাইলে আইনানুগভাবে পারিবারিক আদালতে আবেদন করে অনুমতি নিয়ে আসুন। এভাবে শিশুটিকে দেখতে ভিড় করলে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এক পর্যায়ে তিনি ফাইজাকে কোলে করে তার অফিস কক্ষে নিয়ে যান। ‘এই যে দেখ দাদু, তোমাকে দেখতে কত মানুষ এসেছে, ক্ষুধা লেগেছে নাকি...’ ইত্যাদি আদুরে কথাবার্তা বলতে থাকেন। যখনই নাম ধরে ডাকা হচ্ছিল তখনই ফাইজা চোখ পিট পিট করে তাকাচ্ছিল।তিনি জানান, মায়ের দুধ খাওয়াার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ফাইজাকে লেকটোজেন ব্রান্ডের দুধ প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর ৬০ এমএল করে খাওয়ানো হচ্ছে। ঢামেক নবজাতক বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে কুকুরের কামড়ে আহত ঠোঁট ও মুখে মলম লাগানোসহ ওষুধপত্র খাওয়ানো হচ্ছে। বর্তমানে শূন্য থেকে দুই বছর বয়সী মোট ২৬ জন অনাথ শিশু ছোটমনি নিবাসে রয়েছে বলে জানান তিনি।তৃতীয় তলায় উঠতেই একটি সাইনবোর্ডে সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিশুটির দৈনন্দিন কার্যক্রম শয্যাত্যাগ, প্রাতঃরাশ, খেলাধুলা, গোসল, লেখাপড়া, দুপুরের খাবার, বিশ্রাম, হাতমুখ ধোয়া, বিকেলের নাস্তা, টিভি দেখা, নৈশভোজ ও শয্যা গ্রহণ ও নিদ্রার তালিকা দেখা গেল। সেলিনা আক্তার জানান, শিশুদের দেখভালের জন্য প্রতি বেলায় ৩ জন স্টাফ রয়েছে। দুই বছরের ছোট শিশু রাকিবুল। ফাইজা আসার আগে পর্যন্ত সেই ছিল নিবাসের সবচেয়ে আদরের শিশু। রোববার ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফাইজাকে বুঝে নিয়ে আসার পর থেকে উপ-তত্ত্বাবধায়কসহ সকলেই ফাইজাকে দেখার কাজে ব্যস্ত। অন্যান্য দিন অফিসে এসেই রাকিবুলকে কোলে নিয়ে আদর করে কাজ শুরু করতেন সেলিনা আক্তার। কিন্তু রোববার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ফাইজাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কোলে নিতে পারেননি। একজন স্টাফ দুপুর আড়াইটায় রাকিবুলকে নিয়ে আসলে শিশুটি অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে রাখে। কোলে নিলে এক পর্যায়ে সেলিনা আক্তারের বুকে মুখ লুকায় সে। এ সময় সেলিনা আক্তার স্টাফকে লক্ষ্য করে বলেন, রাকিবুলের বুকটা কিভাবে যেনো কাঁপছে, এখনি কেঁদে ফেলতে পারে। এদিকে ফিরোজুর রহমান ওলিও নামে একজন ধানমন্ডি থেকে লোক পাঠিয়ে শিশুটিকে তিনি তার কাছে রেখে লালনপালন করতে পারবেন কিনা জানতে চান। সেলিনা আক্তার ওলির’র বয়স ৬৫ বছর শুনে বলেন, যে বা যারা লালনপালন করতে নিতে চান তাদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং নিঃসন্তান দম্পত্তি হতে হবে। পারিবারিক আদালতে আবেদন করে বিচারকের রায় পেলে শিশুটিকে দেয়া হবে। আজিমপুর শেখ সাহেব বাজার এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী এমদাদুল হক জানান, তার কোনো সন্তান নেই। ১০ বছর আগে বিয়ে করেছেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখে শিশুটিকে নিতে এসেছেন বলে জানান তিনি। এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement