আন্তর্জাতিক

‘সামাজিক দূরত্ব’ নয়, ‘শারীরিক দূরত্ব’ বলার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কোভিড-১৯ মারাত্মক ধরনের চোঁয়াচে। এজন্য প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব (সোশ্যাল ডিসটেন্স) বজায় রেখে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

তবে এই শব্দ যুগল ব্যবহারে আপত্তি জানাচ্ছেন জনসংযোগ এবং মনস্তাত্ত্বিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে তাদের ভাষ্য, ‘সামাজিক দূরত্ব বললে যতটা দূরে সরিয়ে দেয়ার ভাব ফুটে ওঠে, তা অনেকের মনেই ধাক্কা লাগতে পারে। তাই সোশ্যাল ডিসটেন্স না বলে ফিজিক্যাল ডিসটেন্স বা শারীরিক দূরত্ব বলাই শ্রেয়। এতে সাধারণ মানুষ সঠিক বার্তা পাবেন। তা মেনে চলতেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ-ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের এই প্রস্তাবের গুরুত্ব বুঝে তা মেনে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তাই নতুন শব্দ দুটি এ রকম হতে পারে–সামাজিক যোগাযোগের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।

‘সামাজিক দূরত্ব’ কথা বললেই যেন অস্পৃর্শতার ছায়া ভেসে ওঠে। জাতি-বর্ণ-ধর্মের মধ্যে ফারাকের সেই মধ্যযুগীয় ধারণা যেন উসকে দেয় এই শব্দ যুগল। বিশেষত সামান্য অসুস্থ রোগীর থেকে ছিটকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা তাদের মনে একটা বিচ্ছিন্নতার বেদনাবোধ তৈরি করে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে অসুস্থ বা সামান্য অসুস্থ ব্যক্তিদের জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হবে। এমনকি করোনা সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে ভুল বার্তা দেয়া হবে।

Advertisement

আমেরিকান নর্থ-ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যানিয়েল আল্ডরিখের মতে, এই ‘সামাজিক দূরত্ব’-এর অর্থ অনেকাংশে ভুল হতে পারে। মনে হতে পারে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হচ্ছে। তার চেয়ে ব্যাপারটা এভাবে ভাবলে ভালো হয় যে সামাজিক যোগাযোগ রাখতে কোনো বাধা নেই, স্রেফ শারীরিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে কয়েকটা দিন।

তিনি বলছেন, ‘এই সংকটের সময়ে এই সামাজিক যোগাযোগ সংক্রান্ত যেকোনো শব্দই খুব স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠছে। গবেষণায় দেখছি, এর ফলে মানুষজনের মধ্যেকার স্বাভাবিক টান আলগা হয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো অনেকে আচরণ করছেন। এই সময়টা যুদ্ধ পরিস্থিতির চেয়ে কিছু কম ভয়াবহ নয় ঠিকই। কিন্তু এখানে তো কোনো মানুষ একে অন্যের শত্রুপক্ষ নয়।’

তাই সতর্কতার জন্য এমন কোনো শব্দ ব্যবহার উচিত নয় যাতে মানুষের মধ্যকার সামাজিক আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায়, বলছেন তারা।

আল্ডরিখের উদ্বেগ বিশেষত বয়স্কদের নিয়ে। কারণ, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (সোশ্যাল মিডিয়া) সঙ্গে সেভাবে যুক্ত নন। তাদের কাছে জনসংযোগ মানেই সরাসরি দেখা করা, কথা বলা। ফলে তাদের কাছে ‘সামাজিক দূরত্ব’ শব্দটাই অনেকটা ধাক্কার। বরং তাদের এভাবে যদি বোঝানো যায় যে, দেখা-সাক্ষাৎ সবই হোক, কিন্তু শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে, তাহলে ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

Advertisement

আল্ডরিখের এই বক্তব্য যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেছেন হু-র কর্তাব্যক্তিরা। তারা সবাই একবাক্যে ‘সামাজিক দূরত্ব’ শব্দটিকে সরিয়ে ‘ফিজিক্যাল ডিসটেন্স’ কথাটি চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সেই মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তাই আমাদের উচিত, সামাজিক দূরত্বের বদলে বলা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা। তবে এই সংশোধিত শব্দ বিশ্বজুড়ে কবে প্রতিষ্ঠা পাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই।

এসআর/এমএস