জাতীয়

ব্রিটিশ মুসলিমদের ভাবমূর্তিকে সবার উপরে নিয়ে গেছেন নাদিয়া

ব্রিটেনে গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ প্রতিযোগিতায় এ বছর শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নাদিয়া হুসেইন। বুধবারের চূড়ান্ত পর্বে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানের বড় একটি কেক তৈরি করেন। যেটাকে তিনি তার নিজের বিয়ের গহনা দিয়ে সাজান। নাদিয়া লিডসে বাস করেন। রান্না বিষয়ক এই অনুষ্ঠানটি ব্রিটেনের জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। চূড়ান্ত পর্বটি দেখতে এক কোটি ৩৪ লাখ দর্শক টেলিভিশনের সামনে ওইদিন ছিলেন। এ পর্বটি এখন পর্যন্ত এ বছরের সবচেয়ে বেশি দেখা টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি। বিশ্বব্যাপী যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেখা হচ্ছে জঙ্গিবাদী, পশ্চিমা সংস্কৃতি বিরোধী হিসেবে সেই সময়ই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাদিয়ার ব্রিটেনে এ প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করা নিয়ে ডেইলি মেইলে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। উগান্ডার বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক ইয়াসমিন আলিবাই ব্রাউনের লেখা ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, একজন মুসলিম নারী হয়েও কীভাবে নাদিয়া এ প্রতিযোগিতার শিরোপা অর্জন করলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিযোগিতার বিচারকরা যখন এ বছরের বিজয়ী হিসেবে নাদিয়ার নাম ঘোষণা করেন সেসময় তার গাল বেয়ে পড়ছিলো চোখের পানি। প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক মেরি বেরি কণ্ঠেও শোনা গেছে নাদিয়ার প্রশংসা। পুরস্কার গ্রহণের মুহূর্তে নাদিয়ার মাথায় ছিলো কালো স্কার্ফ, যেটা দিয়ে তিনি মাথার চুল ঢেকে রেখেছিলেন। একজন পরিপূর্ণ মুসলিম নারী হিসেবে তার এ পুরস্কার অর্জন ব্রিটেনে বসবাসরত অন্য মুসলিমদেরকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।সবার কাছ থেকেই পাচ্ছেন প্রশংসা নাদিয়া। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার আগে নাদিয়া আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন এই ভেবে যে, শুধুমাত্র মুসলিম নারী হওয়ার কারণে দর্শকরা তাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। কিন্তু তার দৃঢ় মনোবলের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে সব ভয়-ভীতি। নাদিয়া ডেইলি মেইলকে বলেন, আমি অন্য ব্রিটিশ নাগরিকদের মতোই। তিনি বলেন, অন্যান্য ব্রিটিশ নাগরিকের মতো তাকে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখা হলেও তিনি তাদের মতোই বেকিং করতে পারেন। ব্রিটিশ নাগরিকদের সম্পর্কে যেসব ভুল ধারণা অাছে তা এর মাধ্যমে কেটে যাবে বলে বিশ্বাস নাদিয়ার।ইয়াসমিন আলিবাই ওই প্রতিবেদনে লিখেছেন, এ বছর এ প্রতিযোগিতায় নাদিয়ার জয় এশিয়ার অন্যান্য নারী ও পুরুষদের মর্যাদাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কেননা ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত মুসলিমদেরকে নিয়ে সন্দেহের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম তরুণরা বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে নিজ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু নাদিয়ার মেধা এবং দক্ষতার কাছে এসব নেতিবাচক ধারণা হার মেনেছে। তার বুদ্ধিমত্তা, সংকল্প ও বিনয় তাকে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে।ত্রিশ বছর বয়সী নাদিয়ার জন্ম ব্রিটেনের লুটনে। ব্রিটেনের লুটন শহরের চালনি গার্লস হাইস্কুলে অধ্যয়নকালে নাদিয়া কেক ও বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করতেন। তিন সন্তানের জননী নাদিয়ার বাবা সিলেটের বিয়ানীবাজারের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে নাদিয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক ইয়াসমিন আলিবাই আরো লিখেছেন, আমাদের অনেক রোল মডেল মুসলিম নাগরিক রয়েছে। যেমন- অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ী মো. ফারাহ, ক্রিকেটার মঈন আলী, বিবিসি রেডিও ফোরের উপস্থাপক মিশাল হোসাইন, টেলিভিশন সাংবাদিক রাগেহ ওমরসহ প্রমুখ। কিন্তু সেরা ব্রিটিশ বেকার নাদিয়া ব্রিটেনের মুসলিমদের ভাবমূর্তিকে সবার ওপরে নিয়ে গেছেন।এসআইএস/পিআর

Advertisement