করোনাভাইরাসের এ সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
Advertisement
তিনি বলেছেন, ‘উনি সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী, গত সপ্তাহে উনি করোনার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে নিজে পেছনে ৩৭ জন মানুষকে নিয়ে সচেতন করতে গেছেন। মানে করোনার ব্যাপারে কমন সেন্স ওনার নেই। সারা বিশ্ব যখন লাশ গণনায় ব্যস্ত; আমাদের নির্বাচন কমিশন তখন ভোট গণনায় ব্যস্ত।’
সম্প্রতি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে এ সব কথা বলেন তিনি।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমি আবারও পদত্যাগ করছি। একটাই মাত্র চাকরি ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ছিলাম। পদত্যাগ করেছি। আর কোনো চাকরি নাই। তাও পদত্যাগ করতে চাই। বলতে চাই ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করতে হয়। পৃথিবী থেকে বের হয়ে যাওয়ার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছি না পাঁচদিন ধরে। দু’চার কথা তাও বলতে চাই। করোনার এ ক্রাইসিস সময়ে কথা বলতে চাই মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে, দেশে যখন ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছিল তখন এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবার নিয়ে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন। উনি পরে জন-মানুষের চাপে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। উনি সেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী যিনি করোনা আসার পরে আড়াই মাস সময় পেয়েছেন কিন্তু কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেননি। করোনা মোকাবিলায় যে যুদ্ধ তাতে আমরা জজ ব্যারিস্টাররা কিন্তু সৈনিক না। এটার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করছেন তারা হলেন; ডাক্তার, নার্স, ম্যাজিস্ট্রেট, ইউএনওসহ যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। তাদের বক্তব্য হলো তাদের প্রয়োজনীয় প্রটেক্টিভ সরঞ্জাম পাচ্ছেন না।’
সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, ‘আমার কথা হলো, সৈনিকদের যদি অস্ত্র দিতে না পারেন যুদ্ধ করবে কে? তারপর ও কথা হলো ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করা লাগবে না। এ দেশে কোনোভাবে যদি একটা চাকরি পেতে পারেন যত রকম বেইজ্জতি হন চাকরি থেকে পদত্যাগ করা লাগবে না।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব যখন লাশ গণনায় ব্যস্ত; আমাদের নির্বাচন কমিশন তখন ভোট গণনায় ব্যস্ত। আপনারা জানেন, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে যে করোনা আক্রান্তের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে দুজন প্রবাসী ভোট দিয়েছেন। এই ভোট দেয়ার কারণে আরও ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও নির্বাচন কমিশনের কোনো দোষ নেই। ওনারা মনে করেন, কনস্টিটিউশনাল পোস্টে আছেন।’
সুমন বলেন, ‘যে জায়গায় গেছেন, ওনারা রীতিমতো আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। ওনাদের আর কোনো বদনাম সমালোচনা করা যাবে না। রিজাইন তো প্রশ্নই আসে না। যারা ইউএনও, ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট তাদের প্রটেক্টিভের ব্যবস্থা করেন। নইলে লাশ কাউন্টিং করতে করতে আর কিন্তু বাঁচতে পারবেন না। আর যারা মন্ত্রীরা আছেন আবোল-তাবোল কথা বলতেছেন; আপনারা তো চলে যাবেন, পালাবেন। পুরো দোষ পড়বে আমার নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর।’
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি আহ্বান জানান, ‘আমি আমার নেত্রী শেখ হাসিনাকে বলছি, এইসব জিনিস দিয়ে চাষাবাদ হবে না। এখনও সময় আছে, এদেরকে বদলি করেন। আপনার কাছে আরও কোয়ালিফায়েড বিকল্প আছে। যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের দায়িত্ব দেন। দুঃসময়ে তাদেরকে দায়িত্ব দেন। যেখানে দেশটা অন্তত ধ্বংসস্তুপ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।’
সুমন আক্ষেপ করে বলেন, ‘একটা কথা বলতে চাই। মনে রাখবেন, এটা আমার কথা না; এটা ইতিহাসের কথা। ছাগল দিয়ে কখনো হাল চাষ হয় না। এ জন্য ছাগল বাদ দিয়ে প্রকৃত জিনিস আনেন হাল চাষের জন্য।’
এদিকে, ফেসবুকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ব্যারিস্টার সুমনের এ লাইভ ভিডিও। প্রায় ৩০ লাখে পৌঁছেছে এই ভিডিওর ভিউয়ার সংখ্যা।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কর্তব্য এবং এই মহামারির মধ্যে গাইবান্ধার জাতীয় নির্বাচন করার বিষয়ে কথা বলার পর লক্ষ্য করে দেখি ফেসবুক ভিউআর বেড়েছে। তার পরও মানুষ সতর্ক হোক। করোনায় যেন আক্রান্ত না হয়, সবাই ভালো থাকুক।’
এফএইচ/এফআর/পিআর