প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সাধারণ উপসর্গ হলো জ্বর, সর্দি, কাশি, হাঁচি বা গলাব্যথা। শেষ পর্যন্ত এই ভাইরাস ফুসফুসে আঘাত হানে। এতে রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এমনকি এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
Advertisement
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের হালকা লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। আবার অনেকের এসব উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে।
মাত্র ২০ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে নেয়া লাগে। এদের মধ্যে ১৪ শতাংশের অবস্থা হতে পারে গুরুতর। ছয় শতাংশ রোগীর অবস্থা হয় সংকটপূর্ণ এবং তারা হারিয়ে ফেলতে পারেন ফুসফুসের কার্যক্ষমতা।
কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার ফুসফুসের অবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াই, তার একটি থ্রিডি ভিডিও প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বক্ষ সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. কেইথ মর্টম্যান। পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ছবিগুলো তোলা হয়।
Advertisement
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, ছবিগুলো তোলার কয়েকদিন আগেও আগে ওই ব্যক্তির ফুসফুস একদম ঠিক ছিল।
ডা. মর্টম্যান বলেছেন, ‘রোগ (করোনাভাইরাস) তার ফুসফুসের বিরাট অংশ জুড়ে বিস্তার করেছে। ছবিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ঘাসের মেঘে (টিস্যুগুলো দেখতে ঘাসের মতো দেখাচ্ছে) ছেয়ে গেছে তার ফুসফুস। (হালকা হলদেটে) সবুজ ঘাসের মতো দেখতে এগুলো আসলে নষ্ট টিস্যু।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ওই ব্যক্তি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পর অন্য একটি হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখানে তার সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি ও একটু শ্বাসকষ্ট ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
তাকে ওই হাসপাতালে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্তিম শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এতেও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভর্তি করা হয় জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি (জিডব্লিউইউ) হাসপাতালে।
Advertisement
পরে ডা. মর্টম্যান ও তার টিমের সদস্যরা ওই ব্যক্তির ফুসফুস স্ক্যান করে তা ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে থ্রিডি-তে রূপ দেন। এতেই ধরা পড়ে তার ফুসফুসের করুণ হাল।
সাধারণত ফুসফুসের টিস্যগুলো দেখতে হয় স্বচ্ছ নীল ও পরিষ্কার। ব্রঙ্ককিয়াল ট্রি (শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য বৃক্ষের মতো দেখতে অসংখ্য শ্বাসমূল) হয় যথেষ্ট নীল। ওই ব্যক্তির ফুসফুসও অনেকটা এ রকম দেখা যায়। কিন্তু তার ফুসফুসের বিরাট অংশ জুড়ে টিস্যুগুলো হালকা হলদেটে বর্ণ ধারণ করেছে, যা অনেকটা ঘাসের মতো দেখতে।
তার ফুসফুসের উভয় পাশেই একই দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার ফুসফুসের টিস্যুগুলো এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, ভেন্টিলেটর মেশিনের সাহায্যেও তিনি ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শ্বাসনালীর উপরিভাগের অংশ যেমন-নাক, মুখ, গলা থেকে শুরু করে সর্বশেষ পর্যায়ে ফুসফুসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে করোনাভাইরাস। এক পর্যায়ে এই অংশে তরল পদার্থ ও পুঁজ জমে যায়। আর তখনই শ্বাস নিতে কষ্ট হয় করোনা রোগীর।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখের কোটা পেরিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৫৪ হাজার। ফলে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৩৬০ জন। গতকাল এটি ছিল ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৯ জন।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে সেটি। এতে মারা গেছেন অন্তত ২৩ হাজার ৫৯৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই হাজার।
এসআর/এমএস