দেশজুড়ে

‘করোনার কারণে ঘরে বসে থাকলে তো পেট চলবে না’

দেশব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশে সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের জনসমাগম নিষেধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সচেতনতার জন্য মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। জরুরি কোনো কাজ ছাড়া রাস্তাঘাটে মানুষকে না বেরোনোর জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য।

Advertisement

গত তিনদিন থেকে নওগাঁর রাস্তাঘাটে যানবাহন, অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান ও মোটাসাইকেল চলাচল অনেকটা কমে গেছে। শহরে রাস্তাঘাটে অটোরিকশা ও ভ্যান তেমন চোখে পড়ছে না। এতে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা বিপাকে পড়েছেন। আয় রোজগারের কোনো পথ না থাকায় পেটের দায়ে তারা ঘরে থাকতেও পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় ভাড়ার আসায় নওগাঁ সদর হাসপাতালের গেটে সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন রিকশাচালক।

তাদের মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলার কানমটকা গ্রামের রিকশাচালক বৃদ্ধা আজিজার রহমান বলেন, বাড়িতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। প্রতিদিন খাওয়া খরচ প্রায় ২০০ টাকা। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছি। সংসারের কাজে টাকা ব্যয় করেছি। সপ্তাহে ১ হাজার ৮০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। প্রতিদিন প্রায় ৫/৬শ টাকা ভাড়া পেতাম। গত দুইদিন থেকে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য পুলিশ মাইকিং করছে। এজন্য রিকশা নিয়ে বের হতে পারিনি।

তিনি বলেন, অবস্থা খুব খারাপ। বাড়িতে কিস্তির টাকা নিতে গিয়েছিল। জানিয়ে দিয়েছি কয়েকদিন পর ছাড়া কোনো টাকা দিতে পারবো না। করোনার কারণে বাহিরে মানুষ তেমন বের হচ্ছে না। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে বেরিয়েছি।

Advertisement

মহাদেবপুর উপজেলার আন্ধারকোটা গ্রামের রিকশাচালক রকিব উদ্দিন বলেন, এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুই মাস আগে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছি। প্রতি মাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। গত তিনদিন রিকশা বের করতে পারিনি। এলাকার রোগী খুব করে জোরাজুরি করায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ভয়ে ভয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। ভাইরাসের কারণে রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়া কম চলছে। মানুষের আনাগোনাও কম। রিকশা বের করতে পারছিলাম না। রিকশা পড়ে থাকলে আবার ব্যাটারির সমস্যা হবে। তাই একটু বের করেছি।

এদিকে করোনা আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। আতঙ্কিত না হয়ে আগামী দুই সপ্তাহ ঘরে সময় কাটানোর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার সচেতন করা হচ্ছে।

আব্বাস আলী/আরএআর/পিআর

Advertisement