দেশের প্রয়োজনে যুদ্ধ করার ইতিহাস অনেক জাতির আছে যুগে যুগে। আর এই ইতিহাসের বড় একটি অধ্যায় বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম। ’৭১-এর যুদ্ধে ছাত্র থেকে শিক্ষক, দিনমজুর থেকে কৃষক যারা নেমেছিলেন, নির্দিষ্ট ট্রেনিং শেষে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা এখন স্বাধীন। এই স্বাধীন বাংলাদেশে এবং সারাবিশ্বে বর্তমান সময়ে আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। সারা দেশ আতঙ্কিত এই ভাইরাস নিয়ে। হাট-ঘাট-মাঠ সবই শূন্য। সবাই নিজের নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে থাকাটাই নিশ্চিত করছেন। কোথাও কেউ নেই। মন্দির, মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডা- সব খাঁ খাঁ করছে।
Advertisement
সব যখন প্রায় বন্ধ, খোলা শুধু হাসপাতাল। মানুষ এখন হাসপাতালে। আর এসব হাসপাতালে অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তার-নার্সসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। দেশে দেশে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যে একমাত্র ভরসার আর মানুষের চোখে যারা সুপারহিরো তারা হচ্ছেন ডাক্তার। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক ডাক্তার রোগীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে করোনাভাইরাসের আক্রমণে প্রাণ দিয়েছেন। শতভাগ নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়ার পরেও তারা আক্রান্ত হয়েছেন।
দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজের সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ২১ হাজার ছাড়িয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন পৌনে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা মানুষেরা মূলত শত আতঙ্কের মাঝেও মানুষকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আর এই স্বপ্ন ছড়ানোর সব কৃতিত্ব চিকিৎসকদের। প্রতিটি পেশার একটি দায় থাকে। ডাক্তারদের দায় আছে চিকিৎসা দেয়ার। কিন্তু আমাদের দেশে দায়ের ঊর্ধ্বে মানবিকতাকে মাথায় তুলে করোনা আতঙ্কের মধ্যেও নিজের নিরাপত্তা অনিশ্চিত রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তাররা।
Advertisement
করোনা পরিস্থিতে একজন রোগীর শেষ নিঃশ্বাসের সময় কোনো স্বজন বা প্রিয়জন পাশে থাকবে না। করোনা আক্রান্ত কোনো রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে মৃত্যুর বিরুদ্ধে শেষ যুদ্ধের একমাত্র সৈনিক তার ডাক্তার। এই যুদ্ধে রোগীর সাথে নিজের জীবন ও হারাতে পারেন একজন ডাক্তার বা নার্স।
দেশে দেশে ডাক্তাররা সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন নিজ নিজ সরকার থেকে। দিন শেষে তাদের বড় প্রাপ্তি মানুষের ভালোবাসা। তাদের দেবতা মানছেন সাধারণ মানুষ থেকে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান সবাই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘করোনা সঙ্কটের সময় সাদা পোশাকে যারা রয়েছেন তারা ঈশ্বরেরই নামান্তর। আজ তারা জীবন রক্ষা করছেন, নিজেদের জীবন বিপন্ন করছেন।’ (দৈনিক ইত্তেফাক)
ঝুঁকি নিয়ে আরও অনেক পেশার মানুষকেই কাজ করতে হয়। কিন্তু মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে কাজ করতে পারেন কারা? এই পৃথিবীর এমন কোনো পেশা আছে যে, ওই পেশার লোকেরা জানেন তার পাশে মৃত্যু ঘোরাফেরা করছে, তবু কাজ করে যাচ্ছেন, পালিয়ে যাচ্ছেন না? এমন প্রশ্নের উত্তর মিলবে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ডাক্তাররা কোনো ধরনের নিরাপত্তা পোশাক ছাড়াই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর পরিণতিও ভোগ করতে হচ্ছে তাদের, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে মোট আক্রান্তদের একটি অংশ চিকিৎসক এবং নার্স।
করোনার সাথে যে যুদ্ধ করতে হবে, তা আমরা জেনেছি প্রায় আড়াই মাস আগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেইজিং অফিসকে চীন একটা অজানা রোগের কথা জানিয়েছিল ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে। এই রোগটি বর্তমানে সারাবিশ্বে লাশের সারি ফেলে দিয়েছে। তাহলে আড়াই মাস আগে আমরা এই দৈত্যের কথা যখন জানতে পারি, তারপর এই আড়াই মাসে আমরা কী প্রস্তুতি নিয়েছি? প্রথমে নেতাদের বক্তব্য দেখে অনেক কিছু মনে হলেও এখন সবার কাছে পরিষ্কার, প্রস্তুতি যা ছিল সব শুধু আওয়াজে আর কাগজে-কলমে। আড়াই মাসে আগে যে দৈত্য আমাদের কাছে ছিল বোতলে বন্দী, সে এখন সারা দেশে চোখ রাঙাচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে জীবন। কিন্তু এই দৈত্যকে পরাজিত করতে আমরা আগাম তথ্য পেয়েও যুদ্ধের যে প্রস্তুতি নিয়েছি সেখানে নেই সমন্বয়, নেই কোনো পরিকল্পনা। এত দিন সময় পেয়েও এই যুদ্ধে আমাদের প্রায় এক লাখ যোদ্ধার (ডাক্তার) হাতে অস্ত্র দিতে পারিনি, এমনকি পারিনি তাদের সুরক্ষার চিন্তা করতেও।
Advertisement
দীর্ঘ এই সময়ে ডাক্তারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল এবং ব্যর্থতা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে যত সুন্দর সুন্দর কথা বলেন বাস্তব অবস্থা তার উল্টো। এই যুদ্ধে সবার সামনে যে সৈনিকদের লড়তে হবে, সেই সৈনিকদের মানে ডাক্তারদের নিরাপত্তা পোশাক দেয়া যায়নি এখনো।
প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে প্রায় এক লাখ ডাক্তার আছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত ৪৪, কিন্তু এর মধ্যে ডাক্তার-নার্স ৪ জন। মানে প্রায় ১০ শতাংশ ডাক্তার-নার্স এখনই আক্রান্ত। যদিও এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ করোনার রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার কারণে চট্টগ্রাম এবং ঢাকার অনেক ডাক্তার কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে আতঙ্কে আছেন আরও বড় একটি সংখ্যক ডাক্তার-নার্স। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নেয়ার তথ্য থেকে জানা গেছে, তাদের কেউ কেউ করোনা পজিটিভ আসার আগে পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং সেখানে ডাক্তার-নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় এবং মেডিকেল টেকনোলোজিস্টদের সংস্পর্শে এসেছেন।
যেহেতু এই রোগের জীবাণু নীরবে বহন করা হচ্ছে বা হয়, তাই প্রতিদিন বিভিন্ন কারণে যারা হাসপাতালে যাচ্ছেন বা ডাক্তারদের চেম্বারে যাচ্ছেন তারাও রোগ ছড়াচ্ছেন। এসব হিসাব মেলালে আশার কিছুই পাবেন না। নিরাশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই, আশা দেখাতে পারে শুধু একটি বিষয়, মিরাকল কিছু যদি ঘটে ।
প্রায় ১৭ কোটি জনগণের দেশে এখন পর্যন্ত ৯২০ জনের নমুনা টেস্ট করা হয়েছে, এর মধ্যে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ৪ জন আক্রান্ত এবং করোনা রোগীদের সংস্পর্শে এসে কোয়ারেন্টাইনে আছেন অন্তত ২০ জন। এর মানে ৯২০ জন রোগীর টেস্ট করার মধ্যেই ২৪ জন ডাক্তারের সেবা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
এই সংখ্যাটা আরও ভয়াবহ যদি এভাবে দেখি; আমাদের করোনা আক্রান্ত রোগী ৪৪ জন, কিন্তু এর মধ্যে ২৪ জন ডাক্তার-নার্স জরুরি এই যুদ্ধের মুহূর্তে আমাদের থেকে দূরে আছেন। এই হারে চলতে থাকলে দেশে যদি ২ লাখ করোনা রোগী হয়, তাহলেই আমরা কোনো ডাক্তার বা নার্স চিকিৎসার জন্য পাব না।
যেহেতু এই সংখ্যা এসেছে ৯২০ জনকে পরীক্ষার মাধ্যমে অর্থাৎ এদের সন্দেহ করা হচ্ছিল। যদিও সন্দেহের ঊর্ধ্বে কেউ নন। ১৭ কোটি বাঙালির গ্রাফ যদি হিসেব করেন, তাহলে এক কোটির সন্দেহ দূর (করোনা টেস্ট) করতে করতে আর কোনো চিকিৎসক থাকবেন?
অনেক ডাক্তার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। হাসপাতালে যাওয়ার আগে পরিবার থেকে বিদায় নিচ্ছেন। কিন্তু কেন? কারণ ডাক্তাররা যুদ্ধ করতে রাজি, তবে নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষা করে। ডাক্তারদের নিরাপত্তা শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, আমাদের জন্যও জরুরি, দেশের জন্যও জরুরি। ৪৪ জন রোগী শনাক্ত হতেই আমরা যদি ২৪ জন ডাক্তার-নার্সের সেবা থেকে বঞ্চিত হই, তাহলে এভাবে চলতে থাকলে ২ লাখ রোগী পাওয়ার আগের সব ডাক্তার হারিয়ে যাবেন।
আরও বড় শঙ্কা হলো এই, যে ডাক্তার আমাদের রক্ষা করবেন পিপিই’র অভাবে তারাই হতে পারেন করোনা ছড়িয়ে দেয়ার কারণ। মনে করুন, একজন রোগী করোনায় আক্রান্ত কিন্তু তার মধ্যে সব লক্ষণ নেই। সেই রোগী পাশের কোনো একটি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিলেন। সেখানে ডাক্তার-নার্সরা তার সংস্পর্শে আসলেন এবং তারা অন্য রোগীদেরও চিকিৎসা দিলেন। যেহেতু করোনা সংক্রামক, তাই এই ডাক্তারের মাধ্যমে পরবর্তী প্রতিটি রোগী আক্রান্ত হতে পারেন। ডাক্তার নিজে তো আক্রান্ত হবেনই, তার সংস্পর্শে আসা সবাই আক্রান্ত হতে পারেন। চট্টগ্রামে এমন একটি ঘটনায় একটি হাসপাতালের পুরো আইসিইউ ইউনিট এখন কোয়ারেন্টাইনে।
ঢাকায় করোনায় মৃত্যুবরণ করা এক রোগীর বেলায়ও তাই হয়েছে। ২২ মার্চের দৈনিক বণিক বার্তার একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, ঢাকার মিরপুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী বৃদ্ধের করোনা পজিটিভ আসার আগে তিনি অন্তত দুইটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই যে তিনি দুইটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন সেখানে কতজনের সংস্পর্শে এসেছেন?
এটা স্বাভাবিক যে, করোনা ধরা পড়ার আগে মানুষ পাশের হাসপাতালেই যাবে। কিন্তু এর সমাধান ছিল পিপিই। পিপিই’র অভাবে কেউ নিরাপদ নয়। ডাক্তার, রোগী, দেশ- কেউ না। আমাদের ডাক্তাররা তবু পিপিই ছাড়াই লড়ে যাচ্ছেন। এমন মানবিক ডাক্তার বিশ্বের আর কোথায় পাবেন?
সংকটের এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যখন তার দেশের ডাক্তারদের উৎসাহ দিচ্ছে। আমাদের দেশে ঘটছে তার উল্টো। স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাক্তারদের মনকে দুর্বল করছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন যে দেশে পিপিই’র অভাব নেই। এমনিতেই পিপিই নেই, তার ওপর যখন ডাক্তাররা শুনছেন তাদের অভিভাবক স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে পারছেন না, উল্টো বলছেন পিপিই আছে পর্যাপ্ত। এর মানে তিনি ডাক্তারদের অসত্যবাদী বানাচ্ছেন। কারণ পিপিই’র অভাবের বিষয়টি ডাক্তাররাই সামনে এনেছেন, কারণ এটা তাদের দরকার।
২৪ মার্চ দৈনিক দেশ রূপান্তরের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিলেটের একটি উপজেলার ডাক্তার রেইনকোট পরে চিকিৎসা দিচ্ছেন। একজন ডাক্তার কতটা অসহায় হলে এবং একটি দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ কতটা রুগ্ন হলে রেইনকোট পরে ডাক্তারদের সেবা চালিয়ে যেতে হয়!
যদিও এই রেইনকোট কোনোভাবেই নিরাপদ নয়, কারণ করোনা আক্রান্ত একজন রোগী যদি বমি করেন, সে বমির মাধ্যমে জীবাণু সহজেই ডাক্তারের দেহে চলে যেতে পারে। তবু সাধারণ মানুষ ধন্যবাদ দিচ্ছেন এই ডাক্তারদের, যারা নকল অস্ত্র নিয়ে আসল যুদ্ধে নেমেছেন।
যখন পিপিই না পেয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ডাক্তাররা, তখন আবার ২৫ মার্চ স্বাস্থ্য বিভাগ সারাদেশে নোটিশ পাঠিয়েছে করোনা আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা দিতে হবে। মানে ডাক্তারদের কোনো উপায় নেই। তারা না করতে পারবেন না। এই নোটিশের পর একজন ডাক্তার তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্লাটফর্মে লিখেছেন- ‘ডাক্তার হওয়াটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল মনে হচ্ছে, সারা জীবনে কোনোদিন নিজেকে এত অসহায় লাগেনি।’
যে ডাক্তাররা শুধু মানসিক জোরে বিনা অস্ত্রে যুদ্ধে যাচ্ছেন, তাদের যেখানে সম্বল শুধুই মানসিক শক্তি, যেখানে আপনি তাকে অস্ত্র দিতে পারছেন না, সেখানে তার মানসিক অবস্থা ভেঙে দিয়ে আসলে কী চাচ্ছেন হে মাননীয়?
শুধু মানসিক অবস্থা? স্বাস্থ্য বিভাগ সরাসরি আঘাত করছে ডাক্তারদের। দৈনিক প্রথম আলোর ২৬ মার্চের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, একজন নার্সও অসুস্থ হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে করোনা টেস্ট করতে পারছেন না। একই অভিযোগ করেছেন এর আগে আরও একজন ডাক্তার। তিনি পিপিই ছাড়া করোনা রোগীর সেবা দেয়ায় নিজেই আক্রান্ত হন। কিন্তু এরপর টেস্ট করাতে অনেক কাঠ-খড় পোহাতে হয় তাকে, যা নিজের ফেইসবুক টাইমলাইনে তুলে ধরেন।
পিপিই’র জন্য এই যখন সামগ্রিক অবস্থা, তখন কিছু কিছু পিপিই দেয়ার খবর মিলছে। জাগো নিউজের ২৪ মার্চের একটি সংবাদ; মৌলভীবাজারে ৫ হাজার পিপিই চাহিদা, কিন্তু দেয়া হয়েছে ১০০। সেই সংবাদেই একজন ডাক্তারের বক্তব্য এমন- ‘ওয়ানটাইম এই পিপিই আমাদেরকে ওয়াশ করে পরতে হবে’।
করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে হবে তা আমরা যত আগে জেনেছি, ঘুম ভেঙেছে তত পরে। যদিও যখন সমালোচনা শুরু হয়েছে, আলোচনা শুরু হয়েছে, চাপে পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, তখন তোড়জোড় শুরু হয়েছে পিপিই সংগ্রহের।
এই মুহুর্তে প্রতিটি দিন গুরুত্বপূর্ণ, যে সময় গেছে তা আমরা আর পাব না, হয়তো লাশের বিনিময়ে তার শোধ দিতে হবে। কিন্তু এখন থেকেই মুখ বন্ধ রেখে ডাক্তারদের সুরক্ষার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থমন্ত্রী কাজ করবেন সেটাই জনগণের প্রত্যাশা। যদিও এরই মধ্যে সবার আশা-ভরসার জায়গা প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চের ভাষণে বলেছেন, আমাদের সব প্রস্তুতি নেয়া আছে। সেই ভাষণের সাথে বাস্তব অবস্থাকে মেলালে যদিও আমরা আশাহত হই, তবু সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
বাংলাদেশে আড়াই হাজার মানুষের জন্য একজন ডাক্তার। আট হাজার মানুষের জন্যে একজন নার্স। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ-আমেরিকার মতো সেবা-সন্তুষ্টি আশা করা যায় না। তবু আমরা আশা করি। যখন আশার সাথে প্রাপ্তি মেলে না, তখন সব দোষ আমরা ডাক্তারদের ওপর চাপাই।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সারা দেশের কাছে প্রমাণ করেছে, আমাদের ডাক্তাররা কতটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ডাক্তার আর ভাইরাসের যখন যুদ্ধ চলছে, আমরা তখন ঘরে বসে আছি নিজে বাঁচার স্বার্থে।
জাতির এমন ক্রান্তি লগ্নে ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য সেবার প্রতিটা বিভাগের অবদান নিশ্চয়ই এই পেশার প্রতি আমাদের সম্মান আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজের জীবন দিয়েও নিজের দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার জন্য যে মনোবল এবং নিজের নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন, তা আমাদের ডাক্তারদের রয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। মাঠের এই যোদ্ধাদের প্রতি জাতি কৃতজ্ঞ, এই নায়কদের অভিবাদন।
নিউজিল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন একটি খোলা চিঠি লিখেছেন ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে, ‘আপনাদের জেনে রাখা উচিৎ, আপনারা কখনোই একা নন। আমরা আপনাদের জানাতে চাই পুরো দেশ রয়েছে আপনাদের পেছনে। আপনাদের কারণেই এ সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবো আমরা।’
আমরাও ডাক্তারদের বলতে চাই, আপনারা একা নন, সারাদেশ আপনাদের পাশে আছে, শুভকামনা আপনাদের জন্য। আপনাদের মাধ্যমে আমরা জয়ী হব।
লেখক: সাংবাদিক
এইচএ/এমকেএইচ