সারাদেশে টহলের পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও কাজ করতে দেখা যায় তাদের।
Advertisement
প্ল্যাকার্ডে লেখা- ‘আতঙ্ক না ছড়াই, সতর্ক থাকি সাহায্য করি’, ‘বিদেশ থেকে এসেছি যারা, কোয়ারেন্টাইনে থাকবো তারা’, ‘ঘন ঘন হাত ধুই, করোনা থেকে নিরাপদ রই।’
ঢাকাসহ সারাদেশে তাদের টহল চলছে। সরেজমিনে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার, রামপুরাসহ বেশ কয়েকটি সড়কে সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে। টহল গাড়িতে ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করুন’ লেখা স্টিকারও দেখা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষের সঙ্গে তাদের কথা বলতে দেখা গেছে এবং বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থামিয়ে নির্ধারিত পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে গাড়ির চারপাশে স্যানিটাইজার ছিটানোর দৃশ্যও চোখে পড়েছে। কোথাও জটলা দেখলে তাদের সঙ্গে কথা বলে সরিয়ে দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা।
Advertisement
এর আগে সোমবার আইএসপিআর-এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মঙ্গলবার থেকে সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করা হবে। এ সময় বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তির অবস্থান নির্ণয় ও তাদের নিজ নিজ অবস্থানে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাই হবে সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য।
ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার নির্ধারিত ব্রিগেড কমান্ডাররা বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন বৈঠক করেন। পরদিন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিট অধিনায়করা জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেন।
দেশের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন
আইএসপিআর বলেছে, সেনাবাহিনী বিদেশ থেকে আসাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর পরিকল্পনা নেবে। সেই পরিকল্পনার সময় বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হতে পারে। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে, করোনা পরিস্থিতির ওপর জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি মূল্যায়ন এবং এ অবস্থার প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন ও ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা।
Advertisement
দ্বিতীয়, জেলা প্রশাসনে রাখা গত এক মাসে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান ও বিস্তারিত তথ্য।
তৃতীয়, জেলায় সেলফ কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান।
চতুর্থ, সেলফ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের নেয়া পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি।
পঞ্চম, সেলফ কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্বাচিতদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এমন ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান।
ষষ্ঠ, কোয়ারেন্টাইন কর্মসূচি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রগুলো।
সর্বশেষটি হলো, দায়িত্বে যেসব ব্যক্তি থাকবেন তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) সংখ্যা ঠিক করা।
৬১ জেলায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীর ২৯০টি দল ৬১ জেলায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে। বাহিরে কোনো ক্যাম্প স্থাপন না করে স্থানীয় সেনানিবাস থেকেই এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে সেনাবাহিনী বিভাগীয় ও জেলা শহরে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনসাধারণকে উৎসাহিত করছে। পাশাপাশি তারা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনের বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করছে।
সারাদেশে এ কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর আড়াই হাজারের অধিক সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করছে। করোনা প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এদিকে সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের (২৬ মার্চ) তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে আরও পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে। সুস্থ হয়েছেন আরও চারজন। সবমিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১১ জন। করোনায় দেশে এ পর্যন্ত পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে।
এআর/এএইচ/জেআইএম