জাতীয়

শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে সবই ফাঁকা

যাত্রীদের পদচারণায় মুখর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন ফাঁকা, ভেতরে-বাইরে সুনসান নীরবতা, ভুতুড়ে পরিবেশ। আগে ২৪ ঘণ্টা আনাগোনা ছিল যাত্রী আর যাত্রীদের স্বজনদের। গাড়ি রাখার জায়গা হতো না পার্কিংয়ে। কিন্তু এখন সবই ফাঁকা।

Advertisement

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ২৮টি এয়ারলাইন্সের গড়ে মোট ১২০টির মতো ফ্লাইট উঠানামা করতো। বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা আর বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে এই সংখ্যা চারে নেমে এসেছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে কিছু যাত্রী থাকলেও ২৫ মার্চ থেকে সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে বেবিচক।

শাহজালাল বিমানবন্দরে গত ৭ বছর ধরে দায়িত্বরত বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, এর আগে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলার পর সপ্তাখানেকের জন্য বিমানবন্দরে যাত্রী কিছুটা কম ছিল, তবে সব ফ্লাইট চলতো। বর্তমানে কোনো যাত্রীই নেই, কোনো কোলাহল নেই। বিমানবন্দরের এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সবসময় সতর্ক আছি।

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) বিমানবন্দরের পার্কিংয়ের ম্যানেজারের (সকালের শিফট) দায়িত্বে কর্মরত নূর মোহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, আগে ৮ ঘণ্টা সময়ের ডিউটিতে ৫ মিনিটও বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ হতো না। গাড়ি সারাদিনই আসতো, স্লিপ কাটতে হতো। এখন ৮-১০ মিনিট পর পর একটি গাড়ি আসে। যাত্রী নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে যায়। ১৭ মার্চের পর থেকে গাড়ি একদমই ছিল না। বেশিরভাগ যাত্রী বিমানবন্দর থেকে নেমে গাড়ি ভাড়া করে যেতো। তবে আজ থেকে নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব সেবা বন্ধ।

Advertisement

একই অবস্থা বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ও বহির্গমন টার্মিনালে। কোথাও তেমন কোনো ভিড় নেই। অলস সময় কাটাচ্ছেন ইমিগ্রেশন অফিসাররা। আর অধিকাংশ ইমিগ্রেশন কাউন্টারই ফাঁকা।

গত ২১ মার্চ থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে ফ্লাইট বাংলাদেশে অবতরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য, চীন, হংকং, ব্যাংককের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ চালু থাকার কথা বলেছে বেবিচক।

বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার (২৫ মার্চ) রাত ১২টার পর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে গুয়াঞ্জু থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ১টি, হংকং থেকে ক্যাথে প্যাসিফিকের ১টি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে আসা ১টি ফ্লাইট ঢাকায় এসেছে।

আর ঢাকা থেকে গুয়াঞ্জুর উদ্দেশ্যে চায়না সাউদার্নের ১ টি, ১টি, হংকংয়ের উদ্দেশ্যে ক্যাথে প্যাসিফিকের ১টি নিয়মিত ফ্লাইট ছেড়ে গেছে। পাশাপাশি কূটনীতিক ও বিভিন্ন দেশের আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স ও ড্রুক এয়ারের দুটি বিশেষ ফ্লাইট বিমানবন্দর ছেড়েছে।

Advertisement

তবে শাহজালাল বিমানবন্দর আরও ফাঁকা হওয়ার আশংকা রয়েছে। কারণ ইতোমধ্যে ব্যাংকক থেকে ঢাকা রুটে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে থাই এয়ারলাইন্স। আগামী ২৮ মার্চ থেকে ঢাকায় আসবে না হংকংয়ের ক্যাথে প্যাসিফিক।

শাহজালালের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ- উল-আহসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বেবিচক এসব সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইট উঠানামার অনুমতি দিচ্ছি।’

বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, ‘দেশের স্বার্থেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপাতত ৪ দেশের ফ্লাইট আসছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বাকি ফ্লাইটগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে বুধবার (২৫ মার্চ) পর্যন্ত দেশের ৩৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ জন। এছাড়া আক্রান্তদের বাইরে (আক্রান্ত হতে পারেন এমন) ৪৭ জন আইসোলেশন ও ৪৭ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৮ জন। আর এতে মৃ্ত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৩৫৩ জনের।

এআর/এমএসএইচ/পিআর