চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা না মেনে আড্ডা দেয়ায় বখাটে যুবকদের পিটুনি দিয়ে ঘরে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দিনভর সেনা টহলের পরও বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে আড্ডা দিচ্ছিল এই কিশোর-যুবকরা।
Advertisement
বুধবার (২৫ মার্চ) রাত ১১টা থেকে নগরের কোতয়ালী, চকবাজার, বাকলিয়া ও সদরঘাট থানা এলাকায় এ অভিযান চালায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (দক্ষিণ জোন)।
সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতয়ালী জোন) নোবেল চাকমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ঘাতকব্যধি করোনাভাইরাস সামলাতে বুধবার সকাল থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে যৌথবাহিনী। রাতেও যাতে মানুষ রাস্তা বা পথেঘাটে অযথা ঘোরাঘুরি করতে না পারে যে জন্য আমরা অভিযান চালাই। আমরা চেষ্টা করেছি জনগণকে সচেতন করতে। জনগণকে বাসায় রাখতে। সিএমপির দক্ষিণ বিভাগের কোতয়ালী, বাকলিয়া, চকবাজার এবং সদরঘাট থানায় আমদের টহল ছিল। এ সময় বেশ কিছু এলাকায় নির্দেশনা না মেনে মধ্যরাতেই আড্ডা দিচ্ছিল বখাটেরা। পুলিশ অনেককে বুঝিয়ে, আবার অনেককে ভয় দেখিয়ে ঘরে পাঠিয়েছে। আমাদের সবার উচিত এখন ঘরে থাকা।’
কোতয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশার দিক হলো বেশির ভাগ মানুষ লকডাউনের বিধি মানছে। কিছু কিছু জায়গায় যারা মানছেন না তাদের পুলিশের পক্ষ থেকে বুঝিয়ে বা বলপ্রয়োগ করে বাসায় পাঠানো হচ্ছে। আমরা জেগে আছি জাতিকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই। নগরবাসীকে বলবো আপনারা বাসায় থাকুন।’
Advertisement
সহকারী পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা অভিযানে একটি ভিডিও চিত্র নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘যথারীতি সারাদিনের কর্মব্যস্থতা ছিল আমাদের। এরপরও রাত ১১টার দিকে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার জন্য অভিযানে বের হই। ধন্যবাদ জানাই সাধারণ জনগণকে, যারা (প্রায় সবাই) সরকারের ঘোষিত অনির্ধারিত ১০ দিনের লকডাউন কার্যকর করার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করছে। আজ অনেক জায়গা ঘুরেছি আমরা। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতা দেখেছি আমরা। আমাদের মনে হয়েছে দেরিতে হলেও এদেশের সাধারণ জনগণ সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করেছে। তারা সচেতন হয়েছে। আমরা পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের স্যালুট জানাই। তবে এখনো যারা সরকারের ঘোষণার সাথে তাল মেলাতে পারেনি, তাদের বলতে চাই, সচেতন হোন। ঘরে অবস্থান করেন, আপনি ভালো থাকেন। দেশকে ভালো রাখেন, দেশকে সুস্থ রাখেন। যদি এর অন্যথায় হয় আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা কার্পণ্যবোধ করবো না।’
ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্যরাতেই শহরের ফুটপাতে আড্ডা দিচ্ছিল বেশ কিছু যুবক। পুলিশ সদস্যরা তাদের তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে পুলিশের এমন অ্যাকশনকে বাহবা দিচ্ছেন নগরবাসী। নোবেল চাকমার শেয়ার করা ভিডিওতে কমেন্ট করে নিজেদের মতামত দিচ্ছেন তারা। নয়ন চক্রবর্তী নামে একজন লিখেছেন, ‘দাদা অসচেতনদের অবশ্যই এভাবে সচেতন করবেন।’
রিপন বড়ুয়া লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ দাদা। এক কথায় যেমন কুকুর তেমন মুগুর।’ মোহাম্মদ নাবিল লিখেছেন, ‘খুব ভালো হইছে, গ্রেট জব স্যার’।
Advertisement
প্রসঙ্গত, সরকার ঘোষিত ১০ দিনের লকডাউন বাস্তবায়ন করতে বুধবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে মাঠপর্যা্য়ে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বন্দরনগরের বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়কে এই মুহূর্তে টহল দেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথদল। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ১৭টি টিম কাজ করছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় মোট ৪৩টি টিম এখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাঠে আছে। চট্টগ্রামে অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে জেলা প্রশাসনের ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট। আছেন স্ব স্ব থানার ওসিরাও।
আবু আজাদ/বিএ