কক্সবাজারে প্রথম করোনা আক্রান্ত নারীর এক ছেলে জেলার একটি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের একটি সভায় অংশ নেন। ওই সভায় বোর্ড চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তীসহ অন্তত ৩০ সদস্য অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) ওই নারীর করোনা আক্রান্তের বিষয়ে জানাজানির পর সভায় অংশ নেয়া সদস্যদের মাঝে করোনা-আতঙ্ক কাজ করছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী বিষয়টি স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘হ্যাঁ, কক্সবাজারের একটি কলেজের অধ্যক্ষের মা করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে অধ্যক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, তিনি তার মায়ের সংস্পর্শে যাননি। এছাড়া ওই সভায় প্রবেশের আগে সবাইকে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার সঙ্গে আমরা হ্যান্ডশেক করিনি, ছোঁয়াছুঁয়িও হয়নি।’
সভায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা কোয়ারেন্টাইন মানছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কেউ তার কাছে যাইনি। সবাইকে ফাঁক ফাঁক করে বসানো হয়েছিল। ছোঁয়াছুঁয়ি না হওয়ায় আমরা তেমন কোনো ব্যবস্থা নেইনি।’
Advertisement
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে করোনা আক্রান্ত নারীর পরিবারের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। লকডাউন করা হয়েছে তার দুই সন্তানের বাড়ি। তবে সভায় অংশ নেয়ার তথ্য যেহেতু এসেছে, তাই ওই সভার সবাইকে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। মূলত ওই অধ্যক্ষ যেখানে যেখানে গেছেন, তা প্রশাসন ও অধ্যক্ষকেই শনাক্ত করতে হবে। এছাড়া ইতোমধ্যেই যারা তার সংস্পর্শে এসেছেন তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইন মানতে হবে, নয়তো করোনা সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।’
সূত্র জানায়, কক্সবাজারে প্রথম করোনা আক্রান্ত নারী দেশে ফিরেই চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে ছেলের বাসায় ওঠেন। এরপর তিনি ছিলেন কক্সবাজারের খুটাখালী ও জেলা সদরের টেকপাড়ায় বড় ছেলে বাসায়। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে, ‘কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার আক্রান্ত ওই নারী (৭৫) ওমরাহ থেকে দেশে ফেরেন ১৩ মার্চ। এরপর তিনি নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার সংলগ্ন চান্দগাঁও আবাসিকে ছেলের বাসায় ওঠেন। এছাড়া তার আরেক ছেলের বাড়ি নগরের কালামিয়া বাজার এলাকায় হলেও সেখানে তিনি যাননি। তবে প্রশাসন দুটি বাড়িই লকডাউন করেছে।’
সূত্র আরও জানায়, পরদিন ১৪ মার্চ খুটাখালীর নিজবাড়িতে যান ওই নারী। ১৭ মার্চ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নেয়া হয় কক্সবাজার শহরে। ওইদিন তিনি শহরের টেকপাড়ায় বড় ছেলের বাসায় ওঠেন এবং জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই রোগীকে ১৮ মার্চ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
Advertisement
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতার ধরন দেখে নমুনা পরীক্ষার জন্য ২২ মার্চ পাঠান রাজধানীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর)। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) ওই নারীর করোনাভাইরাসের পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, করোনা আক্রান্ত নারীর সাত ছেলেমেয়ে। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর একজন ছাড়া সব ছেলেমেয়েই তার সংস্পর্শে এসেছিলেন। এ কারণে এলাকাবাসীর আশঙ্কা, করোনা আক্রান্ত নারী ও তারা আত্মীয়দের গমনস্থল, তাদের সংস্পর্শে আসা মানুষরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন, যা অনিরাপদ করে তুলছে চট্টগ্রাম শহরকে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি মিয়া জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন, ‘বাড়ি লকডাউনের পাশাপাশি তার সন্তানদেরও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।’
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন জানান, গত ১৮ মার্চ ওই নারী সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর যেসব চিকিৎসক-নার্স তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন, তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। ডা. মহিউদ্দিন নিজেও কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে জানান।
দেশে করোনাভাইরাসে আরও একজন মারা গেছেন। ফলে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে। অন্যদিকে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি, তাই আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯-ই আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও দুজন। সবমিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন সাতজন।
এসআর/জেআইএম