করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য গত ১৮ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর আরও দুই দফা বাড়িয়ে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেয়া হয়েছে। এই সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সব স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
দেখা গেছে, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), ঢাবি শিক্ষক সমিতির অনুরোধে গত ১৬ মার্চ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রাধ্যক্ষ, অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের নিয়ে করোনাভাইরাসের বিষয়ে এক জরুরি মতবিনিময় সভা করেন। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম ১৮ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছুটি ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করে। এবং ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদেরকে ২০ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। নির্দেশনায় ৩১ মার্চ পর্যন্ত হল বন্ধ থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ বুধবার (২৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা পূর্বঘোষিত ৩১ মার্চের পরিবর্তে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসসমূহ আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ জরুরি ব্যবস্থাপনা এই ছুটির আওতামুক্ত থাকবে। এই সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
Advertisement
আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত হল বন্ধ থাকবে কি-না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, ৯ এপ্রিল পর্যন্ত যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে সেহেতু হলও বন্ধ থাকবে।
পরিচ্ছন্ন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
করোনভাইরাসের সংক্রমণরোধে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের এ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছে বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডেঙ্গুসহ নানা বায়ুবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ভবন, অভ্যন্তরীণ রাস্তা জীবাণুমুক্ত করার জন্য জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারছে না।
গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে (ভিসি চত্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট কর্মকর্তা সুপ্রিয়া সাহাকে পানির ট্রাক দিয়ে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়।
Advertisement
এ বিষয়ে কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। আবাসিক হল, ভবন, রাস্তা, মাঠ সব জায়গায় পর্যায়ক্রমে ঔষধ ছিটানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেন মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি পায় সেজন্য আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। ডেঙ্গু মোকাবিলায় এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদাহরণ হিসেবে থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম এখন প্রায় বন্ধ। ক্লাস-পরীক্ষা ও হলগুলো বন্ধ থাকায় এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো বহিরাগত যেন প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ সময়টাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোপুরি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলবে।
তিনি আরও জানান, আইসোলেশন দুই ধরনের। একটি হলো সামাজিক আইসোলেশন অর্থ্যাৎ অন্য সমাজ থেকে নিজের সমাজকে আলাদা করা। আরেকটা হচ্ছে ব্যক্তিগত আইসোলেশন। যেটা ব্যক্তি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এ দুই ধরনের আইসোলেশন প্রযোজ্য। আমরা আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দুই ধরনের আইসোলেশন পালন করে যাচ্ছি। এবং সামনে অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্যও আমরা নিজেদের প্রস্তুত করছি।
এমএসএইচ/পিআর