বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের কারণে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে গাজীপুর মহানগরীর ছোট-বড় প্রায় ১৩শ বস্তি। এসব বস্তিতে থাকা মানুষের মাঝে এখনও পৌঁছায়নি সচেতন বার্তা কিংবা হ্যান্ড সেনিটাইজার। তারা কেউই মানছেন না স্বাস্থ্য বার্তা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে করোনাভাইসরাস সচেতনতা বার্তা দিয়ে মাইকিং করা হলেও সচেতনতার ধারেকাছেও নেই বস্তিবাসী।
Advertisement
স্থানীয়রা বলছেন বস্তির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও বহুলোক একত্রে বাস করায় তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার তীব্র ঝুঁকি রয়েছে। এসব বস্তিবাসীর জন্য সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ তাদের চোখে পড়ছে না।
সরেজমিনে বস্তিগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরের পরও বস্তিগুলোতে সচেতনতার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বস্তির পরিবারগুলো এ ব্যাপারে সচেতন নয়। শিশুরা অবাধে খেলাধুলা করছে। বাচ্চাদের ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে না। জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য সাবান ব্যবহার করছেন না কেউই। বস্তির বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবায় নেই কোনো পৃথক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হামিদ জানান, ২০১৪ সালের জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে গাজীপুর মহানগরীতে এক হাজার তিনশ নয়টি বস্তি রয়েছে। এসব বস্তিতে প্রায় দুই লাখ লোক বাস করে।
Advertisement
স্থানীয়রা জানায়, যদি কোনো বস্তির একজন ব্যক্তিও এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বে পুরো বস্তি। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে বৃদ্ধ ও শিশুরা। বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দাই গরিব। কেউ সিএনজি অটোরিকশার চালক, কেউ রিকশাচালক, কেউবা সিকিউরিটি গার্ড, দিনমজুর বা পোশাক শ্রমিক। অন্যদিকে বেশিরভাগ নারীই বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তিতে বসবাস করেন আনোয়ারা বেগম। তিনি কয়েকটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, যে বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে মেখে কাজ করতে হয়। কাপড় ধোয়া থেকে মেঝে সব কিছুতেই জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমরা এখানে ভাইরাস থেকে বাঁচতে কিছুই ব্যবহার করি না। এখানকার ঘরগুলোতে একসঙ্গে অনেক মানুষের বসবাস। ফলে কেউ আক্রান্ত হলে আলাদা করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। সরকারিভাবেও আমাদের কোনো সুবিধা দেয়া হচ্ছে না।
বস্তিগুলোর আশপাশের ফার্মেসিগুলোতে কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার নেই। ফার্মেসি মালিকরা বলছেন, তাদের কাছে থাকা হ্যান্ড স্যানিটাইজার সব বিক্রি হয়ে গেছে।
ব্যাংক মাঠ বস্তির স্থায়ী বাসিন্দা ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সবাইকে সচেতন থাকার জন্য বলে আসছি। কিন্তু কাউকেই এ ব্যাপারে সচেতন মনে হচ্ছে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের কোনো সহযোগিতা এখানে আসেনি। কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীও আমরা লক্ষ্য করিনি।
Advertisement
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নিয়ে ৬৩টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে আলাদা করে বস্তিবাসীদের জন্য কোনো সিন্ধান্ত আসেনি। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান এসব বস্তিতে বিশেষ নজর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যদি এসব জনবহুল জায়গায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। যারা বিভিন্ন গণপরিবহনে ও বাসাবাড়িতে কাজ করে তাদের সবার মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লোবস ব্যবহার করা উচিত। এরই মধ্যে বস্তিগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। সকলকে সচেতন হতে হবে।
এফএ/জেআইএম