বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে, ইউরোপের পর প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাসের বিস্তারের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সংস্থাটি বলছে, সেখানে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। একদিক থেকে এমন সতর্কবার্তা এলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে জনজীবন স্বাভাবিক করে ফেলার পক্ষে মত দিয়েছেন।
Advertisement
ডব্লিউএইচও মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমরা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়তে দেখছি। এ থেকে আশঙ্কা করা যায় যুক্তরাষ্ট্র এ ভাইরাস বিস্তারের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
এরইমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশজুড়ে ২১ দিন লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। আশঙ্কা ছিল ভারতে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। ভারত হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল দেশ। এক সপ্তাহেরও কম সময়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া দ্বিতীয় ভাষণে মোদি বলেছেন, করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো- যাই হয়ে যাক না কেন, আমরা ঘর থেকে বের হবো না। প্রতিটি জেলা, প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি গ্রাম লকডাউন থাকবে। এই ২১ দিন মেনে নিতে না পারলে দেশটা ২১ বছর পিছিয়ে যাবে। বাঁচার একমাত্র উপায় হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
ভারতে এ পর্যন্ত ৪৮২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৯ জন মারা গেছেন। কিন্তু দেশটি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
Advertisement
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬ হাজার ৪৫০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৫৯৩ জন মারা গেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফেস মাস্ক ও ভেন্টিলেটর সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে বলে উঠে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক টুইটে।
এর সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প বলছেন, অর্থনীতির চাকা আবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনারও পথ খুঁজছেন তিনি। ট্রাম্প বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে চান তিনি। তিনি বলতে চাচ্ছেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি, তা তিন বা চার মাসের বেশি থাকবে না। ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র শাট ডাউনের জন্য সৃষ্টি হয়নি।
মঙ্গলবার এক টুইটে তিনি বলেছেন, আমাদের জনগণ কাজে ফিরতে চায়। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে এবং বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেয়া হবে। আমরা একসাথে দুটি কাজই করতে পারবো। সমাধানটা সমস্যার চেয়ে বেশি কঠিন হতে পারে না। কংগ্রেসকে এখনই কিছু একটা করতে হবে। আমরা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবো।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলছেন, আমার মনে হয় আমাদের কয়েক মাসের জন্য এ পরিস্থিতি থাকবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা থাকা উচিত। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি।
Advertisement
যেসব দেশে করোনা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে তার একটি স্পেন। সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৯৬ জনে। স্পেনে এ ভাইরাসে আক্রান্তদের ১৪ শতাংশই স্বাস্থ্যকর্মী। এখনও পর্যন্ত করোনার থাবায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইতালিতে পর পর দুদিন মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে, তবে সে সংখ্যাটিও ৬শর বেশি। তবে ইতালিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা যা হিসাবে আছে তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তেমনটা হলে ৬ কোটির দেশটিতে আগামী সপ্তাহ নাগাদ আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যাবে।
দু সপ্তাহ আগে ইতালির নেয়া শক্ত পদক্ষেপের সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের তথ্যে বোঝা যাবে দেশটিতে আসলেও আক্রান্তের হার কমছে কি না।
বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার কারণে বিশ্বের প্রায় ১৭০ কোটি মানুষকে ঘরবন্দি থাকতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে দু মাসের জন্য জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা জারি করেছে ফ্রান্স।
দক্ষিণ আফ্রিকাতেও তিন সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫৪। আফ্রিকা মহাদেশে এটিই সর্বোচ্চ। বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহারের চিন্তা চলছে থাইল্যান্ডে, বুধবার থেকে কারফিউ জারি হচ্ছে মিসরে। একবছরের জন্য পিছিয়েছে টোকিও অলিম্পিক।
এদিকে চীন দাবি করছে, তারা সেখানে করোনার বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। গত কয়েকদিনে যেকজন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবাই-ই অন্য দেশ থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে চীনের এমন দাবির বিশ্বাযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
সূত্র : গার্ডিয়ান।
এনএফ/এমআরএম