শিল্প-কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা যথাসময়ে প্রদানে বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে কাজে লাগিয়ে এক শতাংশ সুদে এই তহবিল গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত রফতানিমুখী উৎপাদন খাতকে আগামী ১ বছরের জন্য ঋণের সুদ মওকুফ করার দাবি জানানো হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে ডিসিসিআই।
এতে বলা হয়, ‘এ মুহূর্তে বিশ্বের অর্থনীতিতে ও মানবজীবনে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ মহামারি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, শিল্পোৎপাদন, আন্তর্জাতিক পণ্যের সাপ্লাই চেইন, বেসামরিক বিমান পরিবহন, পর্যটন ব্যবসা, খুচরা ও পাইকারি ক্রয়-বিক্রয়, আমদানি, রফতানি, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ হ্রাসসহ বেকারত্ব বাড়িয়ে অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।’
এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে ডিসিসিআই বলছে, ‘জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) হিসাব মতে ২০২০ সালে সারা বিশ্বে করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ১.৫ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে আনুমানিক ২.৫ কোটি লোক চাকরি হারাতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের কারণে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১.১ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে এবং প্রায় ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩০ সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ তাদের চাকুরি হারাতে পারে।’
Advertisement
‘করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই তৈরি পোশাক শিল্প, চামড়া, ওষুধ, পর্যটন, যোগাযোগ ও পরিবহন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন খাত হুমকির মুখে পড়েছে।’
‘অন্যদিকে বৈশ্বিক মন্দার মুখে বাংলাদেশের প্রধান বাজার যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাতে বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি সংকুচিত হয়ে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অনেক দেশই লকডাউন ঘোষণা করায় বড় বড় বিপণিবিতান ও অনলাইন বাণিজ্য নেটওয়ার্ক বন্ধ রয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের সামগ্রিক রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাণ বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির স্বার্থেই সহায়তা করা প্রয়োজন।’
অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সময়োপযোগী, সহায়ক পরিকল্পনা ও নীতিসংশ্লিষ্ট কিছু প্রস্তাব জানিয়েছে ডিসিসিআই। তা হলো- শিল্প-কারখানায় যাতে যথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদান করা যায়, সেজন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে কাজে লাগিয়ে ১ শতাংশ সুদে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা।
ক্ষতিগ্রস্ত রফতানিমুখী উৎপাদন খাতকে আগামী ১ বছরের জন্য ঋণের সুদ মওকুফ করা। রফতানি খাতকেও রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) স্কিমের আওতায় আনা। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে যাতে তারল্য সংকট দেখা না দেয়, সেজন্য আগামী ১ বছরের জন্য ক্যাশ রিজার্ভ রেশিওর (সিআরআর) ন্যূনতম মাত্রা কিছুটা শিথিল করা।
Advertisement
উল্লেখ্য, ডিসিসিআই বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব-সতর্কতার পদক্ষেপ, যেমন- ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে শিথিলতা, ইডিএফ ফান্ড থেকে ঋণগ্রহণের সময়সীমা ও ব্যাক টু ব্যাক এলসির অর্থ পরিশোধের সময় বাড়ানোর মতো বেসরকারি খাতবান্ধব সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
এসআই/জেডএ/এমএস