করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে সংবাদপত্র শিল্পে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের পত্রিকাগুলো বন্ধের পর্যায়ে চলে গেছে। শীর্ঘস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রকাশ সংকুচিত অথবা শুধু অনলাইন ভার্সন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে আগামী ২৬ মার্চ নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) নেতারা সভা করে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।
Advertisement
অনেক দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লাশের মিছিল লম্বা হচ্ছে। এ কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া অধিকাংশ দেশের সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও একই পরিস্থিতি।
প্রভাব পড়েছে দেশের সংবাদপত্রেও। কাগজের সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে এই আতঙ্কে অনেকে পত্রিকা কেনা ও পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে ছোট সংবাদপত্র প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শীর্ঘ দৈনিকগুলো সংকুচিত হওয়ার পথে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম মঙ্গলবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর প্রভাব চরমভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর পড়বে। এর প্রভাব সব শিল্পের মধ্যেই পড়বে। সংবাদপত্র শিল্পেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব কিছু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় পত্রিকার পাঠক ও হকাররা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। এতে পত্রিকা বিক্রি কমে যাচ্ছে। অপরদিকে বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিচ্ছেন। ফলে পত্রিকা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেকে ছাপানোর সংখ্যা, পত্রিকার নির্ধারিত পাতা কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার পত্রিকা ভার্সন বন্ধ করে শুধু অনলাইন ভার্সন চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এতে অনেক সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়বে।’
পাঠকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন ‘সংবাদপত্র প্রিন্ট ভার্সনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয় না, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের সম্পাদকমণ্ডলীর সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মঙ্গলবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কাগজের মাধ্যমে এ ভাইরাস বহন হয় না, বা বেঁচে থাকতে পারে না।’
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত মঙ্গলবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তের পর সব পত্রিকা ছাপানোর সংখ্যা কমে গেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এই আশঙ্কায় মানুষ কাগজের তৈরি পত্রিকা হাতে নিচ্ছেন না। সব কল-কারখানা ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পত্রিকা বিক্রি কমে যাওয়ায় ছাপানোর সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। পত্রিকা ছাপা ও পাতা সংকুচিত করা হচ্ছে। শুধু করোনাভাইরাসের সংবাদ দিয়ে একটি পত্রিকা তৈরি করা কঠিন। তবে এসব বিষয়ে আগামী ২৬ মার্চ নোয়াবের সভা ডাকা হয়েছে। সেই সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
Advertisement
সর্বপরি কাগজের পত্রিকা সংকোচিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে দেশের এমন পরিস্থিতিতে অনেক সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের এমন পরিস্থিতিতে মানুষ চাল-ডাল কিনবে নাকি সংবাদপত্র কিনবে? এমন পরিস্থিতিতে মানুষের সুষ্ঠুভাবে পরিবার নিয়ে বাঁচার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেখানে মানুষ সংবাদপত্র কেনার কথা ভাবছে না।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অনেক পত্রিকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যারা চালু রাখবেন তারা কতদিন নিয়মিত করতে পারবেন তা বলা যাচ্ছে না। সংবাদপত্র বন্ধের ফলে অনেক সংবাদকর্মী চাকরিচ্যুত হবে। এ অবস্থায় আমাদের নিজেদের বিবেক-বুদ্ধির সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এদিকে ঢাকা মহানগরের মধ্যে সংবাদপত্র বিক্রি কমে গেলেও মফস্বলে বিক্রি কমছে না বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক তালুকদার।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ফলে সংবাদপত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এতে করে অনেক সংবাদকর্মীর চাকরি চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ এ নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। এ কারণে অনেকে সংবাদপত্র কেনা ও পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন।’
এমএইচএম/জেডএ/এমএস