করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সারাদেশে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন ব্যবস্থা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রেল, সড়ক ও নৌচলাচল। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আজ থেকে সব লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল বন্ধ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আগামী ২৬ মার্চ থেকে সকল ট্রেনের টিকিট বিক্রির বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেল মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ আলম।
Advertisement
এদিকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে যাত্রীবাহী নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। এ বিষয়ে লঞ্চ মালিকরাও একমত হয়েছেন। যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকবে। করোনাভাইরাস সংক্রামণরোধে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ (লকডাউন) থাকবে। মঙ্গলবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক ভিডিও বার্তায় একথা জানান। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
Advertisement
এতে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার দেশবাসী, জনগণ, যাত্রীসাধারণ, মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছে যে, আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহন লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ওষুধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, পচনশীল পণ্য পরিবহণ-এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। পণ্যবাহী যানবাহনে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না বলেও ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধের কার্যক্রমে দেশের সব জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
করোনার বিস্তাররোধে আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। সোমবার (২৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সরকারি ছুটি এবং ২৭ ও ২৮ মার্চ সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মূলত ২৬ মার্চ থেকেই সারাদেশের সরকারি অফিসগুলো বন্ধ থাকবে। এছাড়া ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে সরকারি অফিসগুলো খোলা থাকবে।
Advertisement
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হবে সেনাবাহিনী। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে।’
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী বিশেষ করে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইনের বাধ্যতামূলক সময় পালনে ত্রুটি বা অবহেলা করছে কি-না তা পর্যালোচনা করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা এ জন্য স্থানীয় আর্মি কমান্ডারের কাছে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আইন অনুসারে অনুরোধ জানাবেন।’
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাসটি। এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৮ এবং মারা গেছে ১৬ হাজার ৫১৪ জন। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক লাখ দুই হাজার ৬৯ জন।
করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। ইউরোপের এই দেশটিতে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ৬০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃত্যু ছয় হাজার ৭৭। দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৭৮৯। ফলে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭ হাজার ৪৩২ জন।
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে চীনে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ১৭১ এবং মারা গেছে তিন হাজার ২৭৭ জন।
বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন তিনজন।
করোনার বিস্তাররোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব বিপণিবিতান। এছাড়া মুলতবি করা হয়েছে জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারিক কাজ। এমনকি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএ/জেআইএম