আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা বাড়িয়ে করোনার বিস্তার কমানো সম্ভব। এটা বিশ্বের যে কোনো স্থানের জন্যই প্রযোজ্য। সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে শুধুমাত্র আবহাওয়া পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই ভাইরাসের প্রকোপ একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়।
Advertisement
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৮ এবং মারা গেছে ১৬ হাজার ৫১৪ জন। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ২ হাজার ৬৯ জন।
করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। ইউরোপের এই দেশটিতে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ৬০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃত্যু ৬ হাজার ৭৭।
Advertisement
দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৯। ফলে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭ হাজার ৪৩২ জন।
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে চীনে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ১৭১ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ২৭৭ জন।
এদিকে, চীনের বেইহাং এবং সিনঘুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলছেন, চীনের শতাধিক শহরে আবহাওয়া উষ্ণ এবং সেখানকার আদ্রতা বাড়তে থাকায় কোভিড-১৯য়ের প্রকোপ কমেছে।
এক গবেষক লিখেছেন, উচ্চ তাপমাত্রা এবং আদ্রতায় দেখা গেছে, তাৎপর্যপূর্ণভাবে কোভিড-১৯য়ের প্রকোপ কমছে। গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উষ্ণ তাপমাত্রা, তাপ এবং আদ্রতা কেবলমাত্র ভাইরাসের প্রকোপ কমাতে পারে। কিন্তু এটা ভাইরাসের বিস্তার বন্ধ করতে পারে না।
Advertisement
চীনে যখন এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছিল তখন সেখানকার তাপমাত্রা কম ছিল। চারদিকে ঠান্ডা আর কম তাপমাত্রার কারণে ভাইরাসের প্রকোপ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত সপ্তাহ থেকে চীনে এই ভাইরাসের প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। সেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে। এটা দেশটির জন্য অনেক বেশ ইতিবাচক। কারণ এর মধ্যেই সেখানে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
গবেষকরা বলছেন, শীতকালীন আবহাওয়ায় ঠান্ডা, কাশি এবং জ্বরের মতো উপসর্গগুলো বেড়ে যায়। এ সময় ভাইরাস খুব সহজেই বিস্তার লাভ করতে পারে এবং শরীরে হানা দিতে পারে। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে না।
এর আগে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস টিকে থাকতে পারে না। চীনা গবেষকরা বলছেন, প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে করোনার প্রকোপ কমার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ তাপমাত্রা যত বাড়বে ভাইরাসের বৃদ্ধি তত ঠেকানো সম্ভব হবে। তবে শুধুমাত্র তাপএমাত্রা বাড়িয়েই এই ভাইরাসের বিস্তার একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়।
এদিকে, চীনে নতুন করে সংক্রমণের আতঙ্ক তৈরি করছে বিদেশফেরত নাগরিকরা। কারণ দেশটিতে এখন স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে এলেও সেখানে বিদেশফেরতদের কারণে নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
টানা তিন মাস প্রাণপণ লড়াইয়ের পর করোনাভাইরাস মহামারি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এনেছে চীন। টানা কয়েকদিন দেশটিতে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। তারপরও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। কারণ, বিদেশফেরত নাগরিকদের শরীরে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিগগিরই চীন আরেক দফা মহামারির মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
নভেল করোনাভাইরাসের উৎস উহানে মহামারি নিয়ন্ত্রণে যে মেডিকেল টিম কাজ করছে, এর নেতৃত্ব রয়েছেন প্রফেসর লি লানজুয়ান। বলাবাহুল্য, এই কাজে দারুণ সফল দলটি। তারপরও দুশ্চিন্তা দূর হয়নি।
প্রফেসর লি বলেন, ‘বেইজিং, সাংহাই, গুয়াংঝু, শেনঝেন ও হাংঝৌর মতো শহরগুলো অনবরত আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রয়েছে। আমি খুব উদ্বিগ্ন যে, বিদেশফেরত ঘটনাগুলো আমাদের দেশে আরও বড় মহামারির সূত্রপাত করতে পারে।’
টিটিএন/জেআইএম