জাতীয়

কাল গণহত্যা দিবস

আগামীকাল বুধবার ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাক-হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে চালায় বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’। ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত্রি।

Advertisement

২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার সেই নৃশংস ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়।

২৫ মার্চ পাক-হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২৫ মার্চ কালরাতে শুরু হওয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ধরে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি দেশ স্থান করে নেয়।

আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে একসময় গণহত্যার এই বিষয়টি চাপা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। ১৯৭৫ সালের পর এই অপরাজনীতিতে জড়িত ছিল সামরিক-বেসামরিক আমলা, তাদের প্রতিনিধি স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও তার পাকিস্তানি দোসররা। গণহত্যার বিষয়টিকে তারা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করে। এর উদ্দেশ্য ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি অবলেপন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হয়।

Advertisement

প্রতিবার এই দিনটি এলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতো। এবার তার ব্যাতিক্রম ঘটেছে। করোনাভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্ব এক গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল এবার সব কর্মসূচি পরিহার করেছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে একটি বিবৃতি দিয়েছেন, বিবৃতিতে তিনি ২৫ মার্চ কাল রাত্রিতে নিহত সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিশ্ব সভ্যতার এক সঙ্কটময় মুহূর্তে আমাদের জাতীয় জীবনে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস সমাগত। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সঙ্কটের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ইতোমধ্যে মুজিববর্ষের বছরব্যাপী কর্মসূচি পুর্নবিন্যাস করা হয়েছে এবং ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে বাতিল করা হয়েছে।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবাসীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করেছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ত্রিশ লক্ষ শহীদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে ভয়াবহ এই বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবিলায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করাই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশবাসীর সম্মিলিত সচেতনতা, সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি পালনই পারে ভয়াবহ এই সঙ্কট থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

Advertisement

এফএইচএস/এমএফ/জেআইএম