বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মানুষকেই এখন মৃত্যু ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে। করোনাভাইরাস এখন সবাইকে করে তুলেছে বিচলিত। চিন্তিত, উদ্বিগ্ন।
Advertisement
কিন্তু জানেন, বাংলাদেশের শতাধিক ক্রিকেটারদের কাছে এই করোনা শুধু মৃত্যু ঝুঁকিই নয়, এখন চরম অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তারও বড় কারণ। তারা যারপরনাই চিন্তিত। প্রিমিয়ার লিগ না হলে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়বেন এবং অন্তত ১০০ থেকে ১২৫ জন ক্রিকেটার পড়ে যাবেন চরম অর্থকষ্টে। তাদের ২০২০ সালে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে।
ভাবছেন এবং কেউ কেউ হয়ত, এটুকু পড়ে বলেও ফেলছেন, ‘করোনায় তো মৃত্যু ঝুঁকির পাশাপাশি কম-বেশি সবার জীবনেই অর্থ কষ্ট নেমে এসেছে। আসবেও। এ আর নতুন কি? আর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা তো অনেক টাকা রোজগার করেন। না হয়, করোনার কারণে এবার একটু অর্থনৈতিক মন্দায় কাটলো!’
কেউ তা বলতেই পারেন। তবে সেটা খুব কম সংখ্যক ক্রিকেটারের জন্য প্রযোজ্য। মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদসহ যারা তিন না হলে অন্তত দুই ফরম্যাটে জাতীয় দলে খেলেন। বোর্ড ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে যে ১৭ জনের সাথে বাৎসরিক চুক্তি করেছে, যারা মাসে গড়পড়তা ৪-৫ লাখ টাকা বেতন পাবেন।
Advertisement
এর বাইরে আর বড়জোর ১২ থেকে ১৩ জন ক্রিকেটার আছেন যারা ঘুরে-ফিরে জাতীয় দলের হয়ে খেলেন কিংবা জাতীয় দলের আশে-পাশে থাকেন। তারা টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলে ম্যাচ ফি পান মোটা অংকের। ওই ৩০ জনের অন্তত ১৫ জন বিপিএল খেলেও ৩০-৪০ কিংবা ৫০-৬০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পান।
এর বাইরে জাতীয় লিগ আর বিসিএল খেলেও ম্যাচ ফি জোটে। সব মিলিয়ে বোর্ডের সাথে চুক্তিভূক্ত ১৭ জনের বাইরে আরও ১২-১৩ জন- মানে মোট জনা তিরিশেক ক্রিকেটারের বছরে আয় রুজি ভালই।
অতি মাত্রায় সচেতন যারা তারা হয়ত আরও একটি প্রশ্ন তুলবেন। বলবেন, ওপরে যে সব আয়ের উৎসের কথা বলা হলো এর বাইরে অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন, তাদেরও গড়পড়তা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে মাসোহারা দেয় বোর্ড। সে সংখ্যাও কম নয়, ৫০-৬০ জনের মত। তাহলে?
হ্যাঁ, অনেকেই হয়ত জানেন না যে, বিপিএল খেলেন না, জাতীয় লিগ ও বিসিএলে যে ৬০ জনের তালিকা আছে, সেখানেও নেই- এমন অন্তত ১০০ বা তার বেশি ক্রিকেটার আছেন যাদের কাছে প্রিমিয়ার লিগ হলো ‘অন্ধের যষ্টি।’
Advertisement
তাদের বছরের আয় বলতে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত ১০০ ক্রিকেটার আছেন, যাদের রুটি রুজির একমাত্র উৎস প্রিমিয়ার লিগ। তারা কেউ ৫ লাখ, কেউ বা ৬-৭ বা ৮ কিংবা ১০ বা ১২ লাখ টাকা পান, সেটা দিয়েই চলে তাদের সারা বছরের সংসার।
এখন কোন কারণে যদি এবার প্রিমিয়ার লিগ সত্যিই না হয়, তাহলে তাদের অবস্থা কি হবে? ভাবুন তো একবার! করোনা ভাইরাসের কারণে সত্যিই যদি প্রিমিয়ার লিগ না হয়, তাহলে ক্রিকেটারদের বড় অংশের কি করুণ অবস্থা হবে? তা নিয়ে চিন্তিত সিনিয়র-জুনিয়র ক্রিকেটার সবাই। এমনকি ঢাকা লিগ খেলে খেলেই যিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক, কোচ-ম্যানেজার এবং বোর্ড পরিচালক হয়েছেন, সেই খালেদ মাহমুদ সুজন যারপরনাই চিন্তিত ।
আজ জাগো নিউজের সাথে আলাপে আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, সত্যিই যদি শেষ পর্যন্ত লিগ না হয়, তাহলে ক্রিকেটারদের যে কি করুণ অবস্থা হবে? তা ভেবেই মনটা অস্থির।
সুজনের ব্যাখ্যা, ‘দল বদলে প্লেয়াররা কম বেশি অগ্রীম অর্থ পেয়েছে। শীর্ষ তারকাদের কয়েকজন হয়ত মূল পারিশ্রমিকের অন্তত ৫০ ভাগ করে পেয়ে গেছে; কিন্তু মাঝারি মানের ও জুনিয়র ও ক্যারিয়ার শুরু করা নবীনরা নাম মাত্র পারিশ্রমিক পেয়ে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেছে। আবার অনেক প্লেয়ার এক টাকাও পায়নি। এখন যদি সত্যিই আর লিগ না হয়, তাহলে ওসব ক্রিকেটারদের কি হবে? ক্লাব তো বড় অংকের অগ্রিম দিয়ে থাকলে নিতে চাইবে। আর যারা কিছুই পায়নি বা খুব কম টাকা অগ্রিম পেয়েছে তারা কি করবে?’
এ মুহুর্তে ঢাকার ক্রিকেটের অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার তুষার ইমরান, আবাহনীর গতবারের অধিনায়ক ও জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর উঠতি সম্ভাবনাময় পারফরমার আল আমিন জুনিয়রসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার জাগো নিউজের সাথে করা আলাপে প্রায় একই কথা বলেছেন।
তাদের কথার সারমর্ম হলো, ‘শীর্ষ তারকাদের হয়ত তেমন বড় ক্ষতি হবে না। তাদের ঘাটতি পোষাণোর ক্ষেত্র আছে; কিন্তু যারা শুধু প্রিমিয়ার লিগ খেলে আর বিপিএল, এনসিএল ও বিসিএল খেলতে পারে না- তাদের খুব কষ্ট হবে। তারা দারুণ অর্থ কষ্টে পড়ে যাবে।’
আবাহনীর মোসাদ্দেক জানান, ‘আমরা যারা জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি, যারা বোর্ডের সাথে চুক্তিভূক্ত, বিপিএল, বিসিএল আর জাতীয় লিগ খেলি- তার বাইরে অন্তত ১০০’র বেশি ক্রিকেটার আছে, যারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে কবে কখন শুরু হবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। কারণ ওই সামান্য কয়েক লাখ টাকা পারিশ্রমিকই তাদের রুটি-রুজি।’ সত্যিই যদি প্রিমিয়ার লিগ না হয়, তাহলে তারা নিদারুন অর্থ কষ্টে পড়বে।
আর এবার লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে খেলা আল আমিন মোসাদ্দেকের সুরে সুর মিলিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের অনেক ক্রিকেটার এই প্রিমিয়ার লিগ খেলেই সংসার চালান, ইস! কোনো কারণে যদি প্রিমিয়ার লিগ না হয় তারা কি করবেন? তাদের সংসার কিভাবে চলবে।’
এআরবি/আইএইচএস