ভারতের নাগরিক হতে ট্রাভেল পাস হাতে পাওয়ার পরও তা প্রত্যাহার করতে ৫৫ জন নাগরিক আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বরাবর। বাংলাদেশের নাগরিক হতে সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ার ১৩ পরিবারের এসব মানুষ লিখিতভাবে এ আবেদন করেন। তাদের এ দাবিকে জন্ম-মৃত্যুর সমতুল্য বলে উল্লেখ করেছেন। আকর্ষণীয় প্রলোভন এবং অধিক সুযোগ-সুবিধা পাবার আশায় ভারতে যেতে নাম লিখিয়েছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে দাশিয়ারছড়ার ২৮১ জন ছিটবাসী। এর মধ্যে ট্রাভেল পাস নেননি ৩৫ জন। কিন্তু তাদের মনে এখনো অজানা ভয় কাজ করছে। সত্যিই কি তারা এসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। নাকি হতে হবে প্রতারণার শিকার। এরই মধ্যে কয়েকজন ট্রাভেল পাস নিয়ে ভারত ঘুরে এসে হতাশার কথা ব্যক্ত করেন। এ খবর জানাজানি হলে ৫৫ জন নাগরিক তাদের মত পাল্টিয়ে এ দেশে থেকে যেতে চান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ অক্টোবর দাশিয়ারছড়া সফরে এলে তার হস্তক্ষেপ কামনায় দৃষ্টি আকর্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এসব মানুষ। রোববার দুপুরে দাশিয়ারছড়ার লিটন চন্দ্র, বাবুল চন্দ্র বর্মণ, নারায়ণ বর্মণ, বদিয়ার রহমানসহ কয়েকজন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা বাংলাদেশের নাগরিক হতে চান। এজন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বরাবরও একটি লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনকারী ১৩টি পরিবারের মধ্যে দুটি মুসলমান পরিবারও রয়েছে। পরিবারগুলো হলো, নারায়ন বর্মণের চার সদস্য, রাম প্রসাদ বর্মণের চার সদস্য, বাবুল বর্মণের চার সদস্য, শশীভূষণ বর্মণের তিন সদস্য, গজেন্দ্র বর্মণের ছয় সদস্য, কৃষ্ণকান্ত বর্মণের পাঁচ সদস্য, বদিয়ার রহমানের তিন সদস্য, মনিন্দ্র বর্মণের চার সদস্য, মোহন বর্মণের তিন সদস্য, মিলন বর্মণের পাঁচ সদস্য, দধিরাম বর্মণের পাঁচ সদস্য, আব্দুল্লাহ রহমানের পাঁচ সদস্য ও কামনী বর্মণের চার সদস্য ভারত নয় এখন বাংলাদেশের নাগরিক হতে চান। বাবুল চন্দ্র বর্মন (৪০) জাগো নিউজকে বলেন, তিন বিঘা জমিতে কৃষিকাজ করে আমার চারজনের সংসার চলে। গত মাসে ট্রাভেল পাস পেয়ে ৩৯ জন একসঙ্গে ভারতে বেড়াতে যাই। গিয়ে দেখি দিনহাটার কৃষি মেলার পাশে আবাসন গড়া হচ্ছে আমাদের জন্য। ১২ ফিট বাই ১৪ ফিট একটি করে ঘর পরিবার প্রতি বরাদ্দ দেয়া হবে। ঘিঞ্জি পরিবেশে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হবে। কাজ-কর্মের কোনো সংস্থান নেই। তিনি আরো জানান, কুচবিহার জেলার ডিএম এর সঙ্গে দেখা করি। তিনি জানান, জমিজমার বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে খোঁজ-খবর নিয়েছি আমাদের পুনর্বাসনে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই ভারত সরকারের। তাছাড়া বাংলাদেশে নিজের জমিও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে এ অবস্থায় ভারতে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। ট্রাভেল পাসের শর্ত মতে নভেম্বর মাসে ভারতে ঢুকতে হবে। এরপর বাংলাদেশে আসলে পাসপোর্ট করে আসতে হবে। আগে ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে যেসব লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল এখন দেখি সবই মিথ্যা। সবই প্রতারণা। আমাদেরকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। লিটন চন্দ্র আক্ষেপ করে জাগো নিউজকে বলেন, নাগরিকত্বের চয়েজ দেয়ার আগে কয়েকজন নেতা আমাদের এখানে প্রতিদিন ভারতীয় পত্র পত্রিকা এনে ভারত সরকার কি কি সুযোগ-সুবিধা দেবে তা পড়ে পড়ে শোনাতো। এতেও অনেকে আকৃষ্ট হয়েছেন।ভারতীয় উত্তরবঙ্গ ও প্রতিদিন পত্রিকার বরাদ দিয়ে জানানো হয়, ভারত সরকার ছিটবাসীর প্রতি পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাটবাড়ি দেবে,পাঁচ বছরে যাতায়াতের জন্য ট্রাভেলস ডকুমেন্ট দেবে। দুই বছরের শুকনো খাবার, গবাদিপশুর খাবারসহ সর্বপ্রকার খাবার সরবরাহ করবে। এছাড়াও পরিবার প্রতি এককালীন পাঁচ লাখ টাকা করে টাকা অনুদান দেবে। বাস্তবে এসবের কোনাে অস্তিত্ব নেই। সবই ছিল ভাওতাবাজি। জানা যায়, কুড়িগ্রামের অভ্যন্তরে ১২টি ভারতীয় ছিটমহলের মধ্যে ভারতে যেতে আগ্রহী হয়েছেন ৩১৭ জন। তাদের মধ্যে ১৫৮ জন হিন্দু এবং ১৫৯ জন মুসলমান পরিবারের সদস্য। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ছিটমহলে হেড কাউন্টিং এর পর জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৪৪৯ জন। এরমধ্যে ভারত যেতে নিবন্ধন করেছেন ৯৭৯ জন। অপরদিকে, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ৫১টি ছিটমহলের প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কেউ বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ দেখাননি। জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ছিটমহলের যেসব মানুষ এখন নতুন করে নাগরিকত্ব পরিবর্তন করতে চান তারা নিজ দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারেন। বিষয়টি দুদেশের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার এখতিয়ার বহির্ভুত। নাজুল হোসেন/এমজেড/আরআইপি
Advertisement