করোনাভাইরাস মহামারিতে গত কয়েকদিনে রীতিমতো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ইতালি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৯৩ জন, যা এখন পর্যন্ত যেকোনও দেশের জন্যই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। অথচ দু’সপ্তাহ আগেও দেশটির পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ ছিল না। কিন্তু, জনগণের অসচেতনতা আর সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবের কারণে দ্রুতই পাল্টে গেছে চিত্র। খুব শিগগিরই এমন পরিস্থিতি হতে পারে যুক্তরাজ্যেও।
Advertisement
শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৩ জন, যা ঠিক ৭ মার্চ তারিখে ইতালিতে মৃত্যু সংখ্যার সমান। এ বিষয়টি উল্লেখ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘ইতালির মতো পরিস্থিতি থেকে আমরা মাত্র দুই কি তিন সপ্তাহ পেছনে আছি।’
তিনি বলেন, ‘ইতালীয়দের চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্দান্ত। তারপরও তাদের চিকিৎসক-নার্সরা চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এরই মধ্যে ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক হাজার হয়েছে, যা আরও বাড়ছে। আমরা যদি একসঙ্গে কাজ না করি, যদি (ভাইরাস) বিস্তারের গতি কমাতে নায়কোচিত জাতীয় ব্যবস্থা না নিই-তাহলে আমাদের এনএইচএস-ও (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) একইভাবে হিমশিম খাবে।’
কিছুদিন আগেই করোনার উৎস চীনকে মৃ্ত্যুর সংখ্যায় ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। ইউরোপের দেশটিতে করোনাভাইরাসে এপর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৮২৫ জন, আক্রান্ত ৫৩ হাজারেরও বেশি।
Advertisement
অভূতপূর্ব লকডাউনেও সেখানে থামানো যাচ্ছে না করোনার তাণ্ডব। নাগরিকদের আগামী কয়েক সপ্তাহ ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইতালি সরকার। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়। ফার্মেসি ও নিত্যপণ্য বিক্রয়কেন্দ্র বাদে বন্ধ সব দোকানপাট। ভ্রমণেও রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা।
তারপরও করোনার মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না ইতালির স্বাস্থ্য বিভাগ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেশটির উত্তরাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, রোগী রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক মেডিকেল কর্মী অস্থায়ী তাঁবুতেই দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
চলতি সপ্তাহেই চীনা রেডক্রসের একটি পরিদর্শক টিম দেশজুড়ে লকডাউনকে গুরুত্ব না দেয়া ও কোয়ারেন্টাইন না মানায় ইতালীয় নাগরিকদের কড়া সমালোচনা করেছে। যুক্তরাজ্যেও একই পরিস্থিতি হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালেন্স। কোয়ারেন্টাইন নির্দেশনা মেনে তরুণদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার জোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
স্যার ভ্যালেন্সের মতে, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আসতে এখনও অন্তত ছয়মাস বাকি। সেই পর্যন্ত মহামারি ঠেকিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হচ্ছে সবাইকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা।
Advertisement
সম্প্রতি বিশেষজ্ঞ, মন্ত্রী-কর্তাদের পরামর্শ না মেনে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পাব, বার ও নাইটক্লাবে মানুষজন জমা হওয়ার প্রেক্ষিতে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্যার প্যাট্রিক ভ্যালেন্স। অবশ্য গত শুক্রবার করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের সব বার, পাব, নাইটক্লাব, রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তবে তার এই নির্দেশনা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র: ডেইলি মেইল
কেএএ/এমএস