সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাঁচতে চাইলে সচেতনতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইজন মারা গেছেন। ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে এরই মধ্যে ১৬০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী মারা গেছে ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। ইতালিতে লকডাউন ঘোষণা করার পরও সেখানে নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
Advertisement
জনবহুল এই দেশে সবার আগে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ছোঁয়াচে এই রোগটি কখন যে কাকে আক্রান্ত করবে, সেটা বোঝার মতো সময়ও আমাদের হাতে থাকছে না। করোনা পরীক্ষা করা নিয়ে বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি খুবই সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়েছেন। যেহেতু ভারতে ১৩০ কোটি মানুষের বিপরীতে করোনা পরীক্ষা করার কিটের সংখ্যা দেড় লাখেরও কম, সে জন্যই তার এই পরামর্শ। তবে এটা আমাদের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য। যদি কারও ফ্লু বা সর্দি থাকে; তাহলে প্রথমে নিজেকে আইসোলেট রেখে লক্ষণ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
• প্রথম দিন শুধু ক্লান্তি আসবে। • তৃতীয় দিন হালকা জ্বর অনুভব হবে, সঙ্গে কাশি ও গলায় সমস্যা। • পঞ্চম দিন পর্যন্ত মাথাব্যথা। পেটের সমস্যাও হতে পারে। • ষষ্ঠ বা সপ্তম দিনে শরীরে ব্যথা বাড়বে এবং মাথা যন্ত্রণা কমতে থাকবে। তবে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পেটের সমস্যা থেকে যাবে। এবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। • অষ্টম ও নবম দিনে সব লক্ষণই চলে যাবে। তবে সর্দির প্রভাব বাড়তে থাকে। এর অর্থ আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে এবং আপনার করোনা-আশঙ্কার প্রয়োজন নেই।
এই কয়টা দিন যদি আমরা একটু নিজেদের আলাদা রাখতে পারি, তাহলে করোনা নামের ভাইরাসটির কোনো সংক্রমণ ঘটবে না।
Advertisement
যে চীন থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি, তারা কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। অনেকেই ধারণা করেছিল, হুবেই প্রদেশ থেকে গোটা চীনে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়বে। যেহেতু ভাইরাসটি ছিল একবারেই নতুন। সে কারণে প্রথম দিকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লেও শুধু আগ্রাসী পদক্ষেপের কারণে এই ভাইরাস অন্য প্রদেশে বিস্তার লাভ করতে পারেনি।
হুবেই প্রদেশ থেকে বের হওয়া কিংবা নতুন কেউ ঢোকায় কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। সেখানেও হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, গণপরিবহন পরিহার করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, সংকটাপন্ন এলাকায় নিয়মিত বিরতিতে জীবাণাুনাশক ছিটানো হয়েছিল। ৮০ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ৭০ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন। যেকোনো দেশের জন্য শিক্ষণীয়।
মহানবী (সা.) বলেন, কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে যে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় মহামরি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেও না। চীন, ইতালি, ইরান, স্পেনসহ অন্যান্য করোনা আক্রান্ত দেশ এই নীতির বাইরে যায়নি।
করোনাভাইরাসের কারণে রাস্তাঘাটে এখন অনেক মানুষকেই মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। জনবহুল এই দেশের সাধারণ মানুষ যতটুকু জানতে কিংবা বুঝতে পেরেছে, সেটা থেকেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। পরিচিত অনেকেই দেখলাম করমর্দন করা বন্ধ করে দিয়েছে, নিয়মিত স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করছে। সব ইতিবাচক লক্ষণ। অনেকেই জানতে পেরেছেন করোনাভাইরাস ফুসফুস আক্রান্ত করে। সেই কারণে অনেক ধূমপায়ী ধূমপানের পরিমাণও অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এটাও কম কিসের?
Advertisement
আমাদের এখন ঘরে থাকা উচিত। বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের অবশ্যই হোম কোয়ারেন্টাইন করা উচিত। অনেকেই মনে করছেন, এতে করে বুঝি সম্মান নষ্ট হবে। কী অদ্ভুত চিন্তা আমাদের! খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। ১৪ দিন ঘরে থাকুন। সকল ধরনের অনুষ্ঠান, জনসমাগমে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। নিজে বাঁচি, অন্যকে ভালো থাকতে সহয়তা করি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকার কারণে যুববয়সী মানুষগুলোর হয়তো কিছু হবে না, কিন্তু বয়স্ক মানুষগুলোর কী হবে?
ছোট একটা গল্প দিয়েই শেষ করি। বয়স্ক বাপ আর ছেলে গেছে চুরি করতে। এখন চুরির মালামাল সরানোর সময় বয়স্ক বাপ লোকজনের কাছে ধরা খেয়ে যায়। যুবক ছেলেটি সেখান থেকে দৌড়ে পালায়। পরের দিন চায়ের দোকানে ছেলে খুব গর্ব করেই বলতে থাকে, ‘গুষ্টির ইজ্জত বাঁইচছে রে, গুষ্টির ইজ্জত বাঁইচছে।’
চায়ের দোকানদার : তোগো গুষ্টির ইজ্জত আবার কেমনে বাঁইচছে?
ছেলে: চুরি কইরতে যাইয়ে বাপ ধরা খাইছে, আমি খাই নাই। ইজ্জত বড় বাঁচা বাঁইচছে।
লেখক : রিয়াজুল হক, যুগ্ম-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
এইচআর/বিএ/পিআর