স্বাস্থ্য

হতভাগিনী সেই নবজাতকের দায়িত্ব নিল সরকার

বিশ্ব শিশু দিবসে কুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত সেই হতভাগিনী নবজাতক শিশুটির সকল প্রকার দায়দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। শিশুটি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ভরণ-পোষণের সব দায়িত্ব বহন করবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করবে। হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান রোববার দুপুরে হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে নবজাতক শিশুটিকে সমাজসেবা অধিদফতরের আজিমপুর শিশু নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা আক্তারের কাছে হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এখন থেকে শিশুটির সার্বিক দায়িত্ব সরকার বহন করবে। ২৭ দিন আগে নবজাতকের জম্ম হলেও আজ দুপুর পর্যন্ত তার নাম ছিল না। হাসপাতালের চিকিৎসক নার্সসহ অন্যান্যরা কেউ রাজকুমারী কেউ রাজকন্যা আবার কেউবা চন্দ্রমুখী নামে ডেকে আসছিল। রোববার গণমাধ্যমের সামনে পরিচালক তার নাম ফাইজা (বিজয়ীনি) ঘোষণা করেন।তিনি জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাকে টেলিফোন করে বলেছেন ওই নবজাতকের প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে পুনর্বাসিত না হওয়া পর্যন্ত যখন যে ধরনের সহায়তা লাগবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে। তিনি বলেন, শিশুটিকে যে অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল, তখনকার সে অবস্থা দেখে কেউ ভাবতে পারেনি সে বেঁচে থাকবে। ঝোপঝাড়ে পরিত্যক্ত ওই নবজাতককে মাংস মনে করে কুকুর খাবার হিসেবে খাচ্ছিল। কুকুরের দল শিশুটির ঠোঁট ও নাকের এবং দুটি আঙ্গুল কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছিল। সকল প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় তার নাম ফাইজা যার শাব্দিক অর্থ বিজয়ীনি রাখা হয়েছে।নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, শিশুটি এখন প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ। তার নাকে ও মুখে রিকন্সট্রাকটিভ প্লাস্টিক সার্জারি প্রয়োজন হলেও বয়স কম হওয়ায় এখন তা করা হচ্ছে না। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে প্লাস্টিক সার্জনরা অস্ত্রোপচার করে রিকন্সট্রাকটিভ সার্জারি করবেন। তিনি জানান, শিশুটির ওজন এখন ২৭১০গ্রাম। শারীরিক কোনো অসুস্থতা নেই। সে কারও সাহায্য ছাড়াই দুধ টেনে খেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পর পর ক্ষুধা লাগলেই কেঁদে  উঠে খাবার চায়। প্রস্রাব-পায়খানাও স্বাভাবিক তার। ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, শিশুটিকে কোনো নিঃসন্তান দম্পত্তি আপন করে কাছে টেনে নিলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। তিনি জানান, কেউ শিশুটিকে লালন পালন করতে ইচ্ছুক হলে পারিবারিক আদালতে আবেদন করে অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।তিনি আরো জানান, তার কাছে আহছানিয়া মিশন থেকে লিখিতভাবে এবং শিশুটির উদ্ধারকারী মহিলাসহ দুজন মৌখিকভাবে শিশুটিকে নিতে চেয়েছেন। সবাইকেই তিনি পারিবারিক আদালতে আবেদন করে অনুমতি নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান।শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক কাজল বলেন, শিশুটিকে যখন উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয় তখন তার চেহারা ছিল বিভৎস। সারামুখ ছিল রক্তমাখা।  ঠোঁটের ওপরিভাগের এক তৃতীয়াংশ ও নাকের কিছু অংশ কুকুর কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছিল। তখন ক্ষতস্থান থেকে অবিরত রক্ত ঝরছিল।তিনি জানান, সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে ক্ষতস্থানে অস্ত্রোপচার কিংবা ডায়াথার্মি মেশিনে হিট দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করা হয়। কিন্তু সদ্য জম্ম নেয়া নবজাতকের রক্তপাত বন্ধে দুটো উপায়ের কোনটিই করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু শিশুটির রক্তপাত অনেকটা নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়।শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এখলাসুর রহমান বলেন, শিশুটিকে কুকুরে কামড়ানোর ফলে জলাতঙ্ক হতে পারতো। ধনুস্টংকার কিংবা বড় ধরনের ইনফেকশন হতে পারতো কিন্তু চিকিৎসক নার্সসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও সঠিক ওষুধপত্র দিয়ে চিকিৎসা প্রদানের ফলে নবজাতক বেঁচে যায়। আজিমপুর শিশু সদনের উপ-তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা আক্তার জানান, সমাজ সেবা অধিদফতরের অধীনে রাজধানীর আজিমপুরের ছোট মনি নিবাসে শিশুদের ছয়বছর পর্যন্ত রাখা হয়। এ মুর্হুতে ১দিনের শিশু থেকে তিনমাস বয়সী ৬টি শিশু রয়েছে বলে জানান তিনি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুর আনুমানিক আড়াইটায় রাজধানীর উত্তর কাফরুলের ডোরিন গার্মেন্টসের দক্ষিণ পাশে পুরাতন বিমানবন্দর এলাকার রানওয়ের পাশ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।ওই সময় সেখানে কয়েকজন শিশু খেলাধুলা করছিল। হঠাৎ করেই তাদের চোখে পড়ে অদূরে ঝোঁপের ভিতর একটি কুকুর মুখ দিয়ে কী যেন কামড়ে ধরার চেষ্টা করছে। কৌতুহলবশত সামনে এগিয়ে যেতেই রক্তমাখা এক নবজাতককে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে তারা। পরবর্তীতে জাহানারা নামে এক নারী শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে শিশু হাসপাতাল ও পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন।এসকেডি/আরআইপি

Advertisement