বহু নাটকীয়তার পর শুক্রবার (২০ মার্চ) সকালে আলোচিত মেডিকেল ছাত্রী নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হলো তারা হলেন- অক্ষয় ঠাকুর (৩১), পবনগুপ্ত (২৫), বিনয় শর্মা (২৬) ও মুকেশ সিং (৩২)।
Advertisement
দিল্লির তিহার জেলে ফাঁসি হয় তাদের। পরে জেল কর্তৃপক্ষের থেকে অপরাধীদের শেষ ইচ্ছার ব্যাপারে জানা যায়। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিনয় শর্মা ও মুকেশ সিংয়ের ইচ্ছা।
জানা গেছে, জেলে বসে নিয়মিত ছবি আঁকতেন বিনয়। জেলসুপারকে তার আঁকা ছবি দিতে তিনি অনুরোধ করেন। এটাই ছিল তার শেষ ইচ্ছা।
মুকেশের ইচ্ছার ব্যাপারে জানা গেছে, তিনি নাকি অঙ্গদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আর তার কাছে যে হনুমান চালিসা আছে, সেটি পরিবারকে যেন দিয়ে দেয়া হয় সেটাও বলেন বিনয়।
Advertisement
মেয়ের ধর্ষকদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নির্ভয়ার মায়ের উচ্ছ্বাস
এদিকে মুকেশ, বিনয়, পবন গুপ্ত ও অক্ষয় কেউই কোনো উইল করে যাননি। ফাঁসির আগে অপরাধীদের শেষ ইচ্ছা জিজ্ঞেস করা হয়। এদিন এই চার অপরাধীকে প্রশ্ন করে কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৫টায় তিহার জেলে তাদের দণ্ড কার্যকর করা হয়। এর ঠিক এক ঘণ্টা আগে জেল কর্তৃপক্ষ ও পশ্চিম দিল্লি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নেহা বনসল তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
নিয়ম অনুযায়ী, বন্দিদের কোনো উইল করার ইচ্ছে থাকলে সেটি জেল সুপারিনটেনডেন্ট ও জেলা ম্যজিস্ট্রেটের সামনে বললে তখনই তা বানিয়ে দেয়া হবে। তবে নির্ভয়াকে খুন করা এই চার অপরাধী উইল বানাতে চায়নি।
Advertisement
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে ফিরছিলেন প্যারামেডিকেলের ওই ছাত্রী। ওই বাসে যাত্রী কম ছিল। একপর্যায়ে বাসচালক-সহকারীসহ অন্তত ৬ জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রেখে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে দুজনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।
গুরুতর আহত প্যারামেডিকেলের ওই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায় দেশটির সরকার। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যায় সে। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকেন।
নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এ তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।
২০১৩ সালে দেশটির দ্রুত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেন। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখেন। অবশেষে নানা নাটকীয়তার পর শুক্রবার ভোররাতে এ ফাঁসি কার্যকর করা হয় চার ধর্ষকের।
এমএসএইচ/পিআর