আন্তর্জাতিক

করোনায় ইতালিতে এত মৃত্যু কেন

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রথম দিকে চীনকে আক্রমণ করলেও এখন ইউরোপকে ধরাশায়ী করেছে করোনা। করোনায় ১০ হাজারের প্রায় অর্ধেক প্রাণ গেছে ইউরোপে। বিশেষ করে ইতালি এখন যেন মৃত্যুপুরী। দেশটিতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

Advertisement

প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে গত বছরের ডিসেম্বরে। করোনায় এক-তৃতীয়াংশ ভুক্তভোগীই চীনের।

দুই সপ্তাহ আগেও করোনায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখের মতো। সেই সংখ্যা এখন প্রায় আড়াই লাখের কাছাকাছি। চীনের বাইরে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ জন। যা এই মহামারির প্রথম দিকের সংখ্যার ৯০ শতাংশ।

করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে এখন পর্যন্ত ৮৬ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী থেকে সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ, দেশটিতে আক্রান্তের তুলনায় মৃতের সংখ্যা অনেক কম।

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সাধারণত করোনা থেকে সুস্থ হতে ১৪ দিন সময় লেগে যায়। তবে অবস্থা গুরুতর হলে ছয় সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

করোনায় মৃতের দিক থেকে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২৭ জনের প্রাণ গেছে করোনায়।

৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ ইতালিতে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার। এ পর্যন্ত চীনে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৪৮ জনের।

বলা হচ্ছে, ইতালিতে আক্রান্তদের অধিকাংশই হালকা সমস্যায় ভুগছেন। তবে করোনা দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ধরাশায়ী করছে বয়স্কদের।

Advertisement

বিশ্বে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর দেশের তালিকায় ইতালির অবস্থান দ্বিতীয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সেখানে মৃতের ৮৭ শতাংশের বয়স ছিল ৭০-এর ওপরে।

জার্মানির বের্নহার্ড নকস্ট ইনস্টিটিউট ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের ভাইরোলজিস্ট জোনাস স্কমিৎ-চানাসিট। তার মতে, দেশটিতে করোনায় উচ্চ মৃত্যুহারের কারণ দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এছাড়া দেশটির স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় তাদের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়।

এখন পর্যন্ত ১৭৯টি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ৪০৭ এবং মারা গেছে ১ হাজার ২৮৪ জন। স্পেনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৭ এবং মারা গেছে ৮৩১ জন।

জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৩২০ এবং মারা গেছে ৪৪ জন। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ২৯৯ এবং মারা গেছে ২১৮ জন, ফ্রান্সে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৯৫ এবং মারা গেছে ৩৭২ জন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৬৫২ এবং মারা গেছে ৯৪ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ২২২ জন এবং মারা গেছে ৪৩ জন।

যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ২৬৯ এবং মারা গেছে ১৪৪ জন, নেদারল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৪৬০ এবং মৃত্যু ৭৬, অস্ট্রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ১৭৯ এবং মৃত্যু ৬।

বেলজিয়ামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৭৯৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। নরওয়েতে ১ হাজার ৭৯০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৭ জন। সুইডেনে করোনায় আক্রান্ত ১ হাজার ৪৩৯ এবং মৃত্যু ১১।

ডেনমার্কে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ১৫১ এবং মৃত্যু ৬, জাপানে আক্রান্ত ৯৪৩ এবং মৃত্যু ৩৩, মালয়েশিয়া এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৯শ এবং মারা গেছে ২ জন, কানাডায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭৩ এবং মৃত্যু ১২, পর্তুগালে আক্রান্ত ৭৮৬ এবং মারা গেছে ৪ জন।

অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫৬ এবং মৃত্যু ৭, কাতারে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬০, পাকিস্তানে আক্রান্ত ৪৫৪ এবং মৃত্যু ২, তুরস্কে আক্রান্ত ৩৫৯ এবং মৃত্যু ৪, সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ৩৪৫, সৌদি আরবে ২৭৪, থাইল্যান্ডে আক্রান্ত ২৭২ এবং মৃত্যু ১, মিসরে আক্রান্ত ২৫৬ এবং মৃত্যু ৭।

ফিলিপাইনে আক্রান্ত ২১৭ এবং মৃত্যু ১৭, রাশিয়ায় আক্রান্ত ১৯৯ এবং মৃত্যু ১, ভারতে আক্রান্ত ১৯৪ এবং মৃত্যু ৪, ইরাকে আক্রান্ত ১৯২ এবং মৃত্যু ১৩।

কুয়েতে করোনায় আক্রান্ত ১৪৮ এবং আরব আমিরাতে ১৪০। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে একজন। অপরদিকে ৩ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।

সূত্র : ডেইলি মেইল

এসআর/পিআর