করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে অনেকে যখন বাড়িতে থাকার কথা চিন্তা করছে, ঠিক তখনই ক্ষুদ্রঋণের কথা মাথায় আসছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর অধিকাংশ মানুষের।
Advertisement
জেলার অনেকে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ও সমিতির ঋণের কিস্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কাজ বন্ধের কথা মনে হলে ঋণের কিস্তি শোধের চিন্তায় কপালে ভাজ পড়ছে সাধারণ মানুষের।
শহরের মাছ পট্টি এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বকফুল ও লতিফুল বেগম জানান, আমাদের নিজেদের কোনো টাকা নেই। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে দোকান করি। ঘরে থাকতে হলে তো দোকান বন্ধ রাখতে হবে। তখন ঋণের কিস্তি শোধ করবো কীভাবে?
শ্রমিক লাবু, মনির ও বাদল বলেন, আমাদের তো কাজ করলে পেটে ভাত জোটে না করলে জেটে না। আমরা কীভাবে ঘরে থাকবো? এর ওপর কমবেশি কিস্তি আছে সবার। সরকারের কাছে অনুরোধ ভাইরাস যতদিন না যায় ততদিন অন্তত আমাদের কিস্তিটা বন্ধ রাখুন। একদিকে করোনার আতঙ্ক তার ওপর কিস্তির চাপে দিশেহারা হয়ে পড়বো। আমাদের জন্য একটু লিখুন।
Advertisement
সদর রোর্ড এলাকার চা বিক্রেতা মো. রায়হান মল্লিক বলেন, দুপুরের দিকে প্রতিদিন দোকানে ভিড় থাকে। একদিন ধরে রাস্তায় মানুষ খুব কম। তাই বিক্রিও কমে এসেছে। এই দোকানের আয় থেকে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। পাশাপাশি দোকান চালানোর জন্য দুটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছি। সেখানে একটিতে সপ্তাহে ১ হাজারর ৭শ টাকা ও অপরটিতে মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এই সংকটের সময়ে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি উত্তোলন স্থগিত করা হোক। না হয় মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আরও অতিষ্ঠ হবে প্রান্তিক জনজীবন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাঠ পর্যায়ের এনজিও কর্মী জানান, ঋণ বিতরণ করার পর উত্তলন করার দায়িত্ব তাদের। কেউ কিস্তি না দিলে পকেট থেকে অফিসকে দিতে হয়। আমাদেরও চাকরি বাঁচাতে হবে। সরকার কিস্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। চাকরি করতে হলে অফিস যা বলবে আমাদেরও তো তাই করতে হবে।
বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিনে দিনে এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। সবশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, আরা মারা গেছেন একজন।
Advertisement
করোনার বিস্তার রোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। এমনকি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এমএসএইচ/পিআর