শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন। অন্য সরকারি চাকরিজীবীদের মতো কিশোরগঞ্জের ভৈরবের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানারও ছুটিই কাটানোর কথা। কিন্তু সকালে শুনতে পান ভৈরব বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুদিন আগেই বাজারে ৩৫-৩৭ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
Advertisement
করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে ব্যবসায়ীদের এই অতিরিক্ত মুনাফার কারবার শুনে তৎক্ষণাৎ থানা পুলিশকে নিয়ে ভৈরবের পাইকারি পেঁয়াজ বাজারে ছুটলেন লুবনা ফারজানা। পেঁয়াজের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখলেন অতিরিক্ত মূল্যে এ মসলাপণ্যটি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে তখন অনেক ক্রেতা। ক্রেতারাই ৭০-৭৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কেনার কথা জানান ইউএনওকে।
তখন ইউএনও দোকানে দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করতে বলেন। এমনকি অনেক দোকানে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খুচরা ক্রেতাদের ন্যায্য দামে পেঁয়াজ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘণ্টা পেঁয়াজ বাজারে থেকে শত শত ক্রেতাকে ৪৫ টাকায় পেঁয়াজ পাওয়ার ব্যবস্হা করে দেন ইউএনও। তবে এসময় তিনি কোনো ব্যবসায়ী বা দোকানীকে জরিমানা করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাননি।
Advertisement
সাধারণ ক্রেতাদের পাশাপাশি গ্রাম থেকে আসা খুচরা প্রত্যেক দোকানদারকেও ৪৫ টাকা কেজি দরে এক বস্তা করে পেঁয়াজ পাওয়ার ব্যবস্হা করে দেন তিনি। এতে ক্রেতারা বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বাজার ছাড়ার সময় ইউএনও ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দেন, কেউ কেজি ৪৫ টাকা দরের ওপরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন না। যদি পরে মোকাম থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে আনতে হয়, তবে সেসব পেঁয়াজও বেশি দামে বেচার আগে তাকে অবগত করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও লুবনা ফারজানা জাগো নিউজকে বলেন, ভেবেছিলাম বাসায় ছুটির দিনে সংসারের কাজকর্ম করে সন্তানদের সময় দেব। দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে গত কয়েকদিন যাবত খুবই ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু সকালে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর পেয়ে বাসায় বসে থাকতে পারলাম না। কারণ আমরা জনগণের কর্মচারী। তাই সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টসহ সব ধরনের বিষয় আমাকে দেখতে হবে। এ কারণে খবর পেয়ে আমি ভৈরব বাজারে গিয়ে নিজে উপস্হিত থেকে সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত মূল্য ছাড়া পেঁয়াজ কেনার ব্যবস্হা করে দিয়েছি। এতে মানুষ উপকৃত হয়েছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এটাই আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এইচএ/পিআর
Advertisement