বিনোদন

রান আউটের বিষয়ে সেন্সরের ব্যবস্থা নেয়া উচিত

তন্ময় তানসেন পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘রান আউট’ মুক্তি পাবে আর ক’দিন পরই। কিন্তু এরইমধ্যে চলচ্চিত্র পাড়ায় ছবিটি নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা ও কানাঘুষা। কারণ সেন্সর ও চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালার বাইরে গিয়ে ছবিটির পোস্টারে ১৮ প্লাস লেখা দেখা গেছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজারের সাথে। তিনি জানালেন বেশ কিছু পরামর্শ-জাগো নিউজ : রান আউট ছবির পোস্টারে ১৮+ প্লাস লেখা রয়েছে। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। শুনেছেন কিছু? গুলজার : হ্যাঁ। কদিন ধরেই এ বিষয়ের সমালোচনা কানে আসছে। বন্ধুবর সাংবাদিক আওলাদ হোসেনের মৃত্যুতে এই কয়দিন শোকে আচ্ছন্ন হয়ে আছি সবাই। তাই বিষয়টিতে খুব এক পাত্তা দেয়ার সুযোগ পাইনি। কিন্তু এখনে মনে হচ্ছে এটি সিরিয়াস আকার ধারণ করেছে। কারণ, অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন এই ছবিটি যদি ১৮ প্লাস লিখে প্রচারের সুযোগ পায় তবে এই ট্রেন্ডটা চালু হয়ে যাবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো নিয়ম বা বৈধতা আমাদের চলচ্চিত্রে নেই। একটা অবৈধ বিষয়কে এভাবে সিদ্ধ হতে দিলে এটা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না হয়তো। কে পরিচালক এমনটি করছেন তাকে ডেকে এনে সেন্সর বোর্ডের উচিত সেটি জেনে নেয়া।জাগো নিউজ : নির্মাতার দাবি তিনি সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার জন্যই পোস্টারে ১৮ প্লাস লিখেছেন...গুলজার : একটা ছবি দীর্ঘদিন পর যখন মুক্তি পায় তখন সেই ছবির নির্মাতা প্রচার-প্রসারণের জন্য অনেক কিছুই বলে থাকেন। কিন্তু পোস্টারে ১৮ প্লাস লিখার মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতার কিছু নেই। যে বিষয় সবার জন্য নয় সেটি সমাজে কিভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে? ১৮ প্লাস বলতে বোঝায় বড়দের জন্য ছবি, যেটি লুকিয়ে দেখতে হয়। এ ধরনের ছবি দেখলে ছোটরা মনে মনে বড়দের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে। তাছাড়া নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি কিশোর-তরুণদের আগ্রহ থাকে বেশি। পরিচালক ছবিটিকে ১৮ বছরের নিচের দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় করতেই এই অভিনব কৌশল ফেঁদেছেন। হতেই পারে এমনটি। সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে টোটালটাই একটা প্রচারের পদ্ধতি। তবে এটা অবশ্যই অপপ্রচার।জাগো নিউজ : ১৮ প্লাস নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত মতামত কী? গুলজার : আমার ব্যক্তিগত মতামতের কোনো সুযোগ নেই এখানে। এটি একটি আইনি এবং জটিল প্রক্রিয়া। যেহেতু আমাদের চলচ্চিত্রে কোথাও ছবিকে গ্রেডিং করার অনুমতি নেই তাই পোস্টারে ১৮ প্লাস লিখে প্রচারণা চালানোটাও অপরাধ। ছবিতে কী এমন আছে যা ১৮ বছরের নিচের কাউকে দেখতে দেয়া যাবে না? সত্যি যদি তেমন কিছু থেকে থাকে তবে সেটি কী করে সেন্সর পার হলো? এসব প্রশ্ন উঠছে। পাশাপাশি অনেকেই দাবি করছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ স্যার তার সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র একটি দৃশ্যের জন্য পোস্টারে ১৮প্লাস লিখে দিতে অনুমতি চেয়েছিলেন। তাকে সেই অনুমতি দেয়নি সেন্সর বোর্ড। বলা হয়েছিলো এর জন্য নীতিমালার পরিবর্তন আনতে হবে যা অনেক জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এখন একজন নবীন পরিচালকের বেলায় সব শুনেও কেন সেন্সর কর্তৃপক্ষ চুপ করে আছে আমার জানা নেই। অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। জাগো নিউজ : এক্ষেত্রে পরিচালক সমিতি থেকে কিছু করার নেই?গুলজার : না। এটি চলচ্চিত্র পরিচালকদের কোনো বিষয় নয়। আমরা বড়জোর সেন্সরের কাছে চিঠি পাঠাতে পারি। সিদ্ধান্ত যা নেয়ার সেটি সেন্সর বোর্ডকেই নিতে হবে। তাছাড়া দেখতে হবে এ বিষয়টি সম্পর্কে সেন্সর বোর্ড অবগত কি না। তাদের অজান্তে এমন কিছু করে থাকলে পরিচালককে মাশুল দিতেই হবে। কেননা, সেন্সর এই ছবিটিকে মুক্তির জন্য অনুমতি দিয়েছে। তারমানে এতে কোনো আপত্তি তোলার সুযোগ নেই। এখন যদি ছবিটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠে, বা এর কোনো কিছু অবৈধ হয় তবে অবশ্যই সেন্সর বোর্ড সেটি বিবেচনায় আনবে। জাগো নিউজ : বিশ্বের নানা দেশে ছবির পোস্টারে ১৮ প্লাস লেখার বৈধতা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে নেই। সেন্সর এবং চলচ্চিত্র আইনে এই নীতিমালার সংশোধন করা যায় না? গুলজার : বেশ কিছু দিন আগে একবার এ বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছিলো। জানা গিয়েছিলো, সেন্সর এবং চলচ্চিত্র আইনে ১৮ প্লাস লেখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে এ বিষয়টি খুব বেশিদূর আগায়নি। তবে এ বিষয়ে একটা কিছু পরিবর্তনের সময় বুঝি হয়ে এসেছে। আর আমি তন্ময় তানসেনকে বলবো, ছবিটি হলে নেয়ার আগে আপাতত এই ঝামেলাটা মিটমাট করে নিন।প্রসঙ্গত, রান আউট ছবিটিতে অভিনয় করেছেন ওমর সানি, সজল, তারিক আনাম খান, মৌসুমী নাগ, রোমানা স্বর্ণা প্রমুখ।এনই/এলএ/আরআইপি

Advertisement